কর ফাঁকির মহোৎসব!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১৮ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকির মহোৎসব চলছে ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে ভ্যাট দিলেও ছোট স্টল ও বিদেশি প্যাভিলিয়নের স্টলগুলো ভ্যাট দেয়ার প্রক্রিয়া মানছে না। মেলায় অংশ নেয়া ৫০ শতাংশের ওপরে প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে।

মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্টল ঘুরে এবং ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট স্টল ও বিদেশি প্যাভিলিয়নের স্টল থেকে ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে কোনো ক্যাশ মেমো দেয়া হচ্ছে না। শুধু অর্থের বিনিময়ে ক্রেতাদের হাতে পণ্য ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে তার কোনো সঠিক প্রমাণ থাকছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রির বিষয়ে নিজেদের মনগড় হিসাব দিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ভালো বিক্রি করলেও বিক্রি নেই- এমন কথা বলছে। বিক্রির সঠিক হিসাব না রাখায় সঠিকভাবে ভ্যাটও পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।

মেলার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে একটু পশ্চিমে গেলেই চোখে পড়বে থাই প্যাভিলিয়ন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্যাভিলিয়নটির মাঝ বরাবর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের চলাচলের রাস্তা রাখা হয়েছে। এ রাস্তার দুপাশে রয়েছে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি স্টল।

এসব স্টল থেকে নারীদের বিভিন্ন পণ্য, শিশুদের খেলনা, শোপিসসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে প্যাভিলিয়নটির কোনো স্টল ক্রেতাদের ক্যাশ মেমো দিচ্ছে না। ক্যাশ মেমো না দেয়ার বিষয়ে শোপিস বিক্রেতা মো. আলম বলেন, শোপিস বিক্রির বিপরীতে ক্যাশ মেমো দেয়ার তো দরকার নেই। আমাদের পণ্যের মান ভালো তা ক্রেতারা জানেন। ক্রেতারাও আমাদের কাছে ক্যাশ মেমো চান না।

প্যাভিলিয়নটির এক স্টল থেকে গলার হার কেনা তেজগাঁওয়ের রাবেয়া খাতুন বলেন, আমি টাকা দিয়েছি, আমাকে হার দিয়েছে। কোনো ক্যাশ মেমো তো দেয়নি। আমিও চাইনি। ক্যাশ মেমো দিয়ে কী করবো? যে পণ্যটি চেয়েছি সেই পণ্যই তো দিয়েছে।

‘ক্যাশ মেমো না নিলে তো প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে’- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাই না-কি? আমি তো এটা জানতাম না। তাহলে এখন থেকে মেলার কোনো পণ্য কিনলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্যাশ মেমো চাইবো।

শুধু থাই প্যাভিলিয়ন নয়, মেলায় ছোট স্টল দিয়ে বসা সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কোনো ক্যাশ মেমো দিচ্ছে না। ক্যাশ মেমো না দেয়ার বিষয়ে জুয়েলারি পণ্য বিক্রেতা মো. জামশেদ বলেন, আমরা ক্রেতাদের কাছে অল্প টাকায় পণ্য বিক্রি করি। আমাদের কাছে থেকে কেউ ১০-২০ হাজার টাকার পণ্য কেনেন না। তাই ক্যাশ মেমো দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ক্রেতারাও আমাদের কাছে ক্যাশ মেমো চান না। এ জন্য আমরাও এর ব্যবস্থা রাখিনি।

ভ্যাট কিভাবে পরিশোধ করেন- জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের একটি নির্দিষ্ট অংকের ভ্যাট দিতে বলা হয়েছে। আমরা সেটি দিয়ে দেবো। ভ্যাট দিতে ক্যাশ মেমোর দরকার নেই।

থাই প্যাভিলিয়ন-৫ এ থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ফল বিক্রেতা মো. সালাউদ্দিন বলেন, আমরা শুধু মেলা উপলক্ষে থাইল্যান্ডের ফল বিক্রি করি। মেলার পরে আমাদের কাছে আর এসব ফল পাওয়া যাবে না। ক্রেতারা আমাদের টাকা দিয়ে ফল নিয়ে যাবে, ক্যাশ মেমো দিয়ে কী করবে? ক্যাশ মেমো তো আর খাবে না! আমাদের যেভাবে ভ্যাট দিতে বলা হয়েছে, সেভাবে ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করবো।

এমএএস/ এমএআর/এমআরএম

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।