বাণিজ্য মেলা যেন ‘আনন্দ মেলা’
হাজারো পণ্যের পসরা নিয়ে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। পণ্যের প্রসারই এ মেলার মূল লক্ষ্য। তবে বিক্রিও কম হয় না এ মেলায়। দেশীয় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছর ধরে অপেক্ষা করে এ আয়োজনের জন্য। অপেক্ষা থাকে ক্রেতাদেরও। পণ্য আর ক্রেতাই এ মেলার প্রাণ। পণ্যের টানে ক্রেতা আসেন আর ক্রেতাদের সঙ্গে আসে আনন্দ।
যান্ত্রিক শহরের এ রাজধানীতে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলায় বসেছে আনন্দমেলাও। এ আয়োজনে অংশ নিয়ে দর্শনার্থীরা প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠছেন। পণ্যের বাজার রূপ নিয়েছে আনন্দবাজারে।
মেলার শুরুর দিন থেকে ভিড়তে থাকেন ক্রেতারা। তাদের অনেকে দল বেধেও আসেন মেলায়। দর্শনার্থীদের অনেকেই কোনো কেনাকাটা না করলেও টিকিট কেটে মেলায় আসেন শুধুই আনন্দ খুঁজতে। হাজার রকম পণ্যের সঙ্গে পরিচিতি হতে অনেকে দিনভর ঘুরতে থাকেন। লাখো প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে প্রকাশ পায় প্রাণের উচ্ছ্বাস।
মেলায় আসা ক্রেতারা যাতে সহসাই আনন্দ খুঁজে পান, তার চেষ্টা থাকে আয়োজক ও অংশ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও। তাই মেলার নকশায় প্রকাশ পায় বিশেষ নান্দনিকতা, স্টল-প্যাভিলিয়ন সাজানো হয় দারুণ সব নকশায়।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আদলে এবার সাজানো হয়েছে মেলার মূল ফটক। এতে ঠাঁই পেয়েছে ‘ঢাকা গেট’র ঐতিহ্যও। উন্নয়ন আর ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি এ গেটই মন কাড়ছে আগতদের। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িক পড়ছে সকাল-সন্ধ্যা। যেন উন্নয়নের সাক্ষী হতেই সেলফি তোলার এ প্রতিযোগিতা।
গেট পার হতেই ফুলের বাগান। বিশাল ফুলের বাগান ঘিরে বসার ব্যবস্থাও রয়েছে। ফুল বাগানে মন মিলিয়ে আনন্দে মেতেছেন দর্শনার্থীরা। শিশুদের জন্যও রয়েছে আনন্দমেলা। প্রায় নিরিবিলিতে বেশখানিক জায়গা নিয়ে করা হয়েছে শিশু কর্নার। এখানে শিশুরা মত্ত নানা রকম খেলায়। আনন্দ মিলছে ফুড কর্নারগুলোতেও।
শেওড়াপাড়া থেকে বান্ধবীকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন নুসরাত। একটি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ঢঙে সেলফি তুলছিলেন দুই বান্ধবী। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তারা। কথা হয় নুসরাতের সঙ্গে। বলেন, ‘আমরা ঢাকার স্থানীয়। এখন তো চাইলেই রাস্তায় বেড়িয়ে আনন্দ করা যায় না। যানজটের শহরে যাবো কোথায়?’
তিনি আরো বলেন, বছর ধরে বাণিজ্য মেলা আর বইমেলার অপেক্ষায় থাকি। এ দু’টি মেলায় যে আনন্দ মেলে, তা তো অন্য জায়গায় মেলে না। পণ্য কিনবো একদিন। আর আনন্দ করতে আসবো বহুদিন।
নিজের আনন্দ প্রকাশ করলেন একটি স্টলের সেলসম্যান নিতা। তিনি সরকারি বাঙলা কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী। গত তিন বছর ধরে বাণিজ্য মেলায় অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করছেন। বলেন, ‘প্রতিদিন হাজারো মানুষের দেখা মেলে। মানুষের সঙ্গে দেখা, মানুষের সঙ্গে কথা। এর চেয়ে আনন্দ আর কোথায় মেলে! এমন আনন্দের মধ্য দিয়েই জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবো।’
২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সমন্বয়ক মোর্শেদ জামান বলেন, বাণিজ্য মেলা তো শুধু পণ্য বেচাকেনার জায়গা নয়। লাখো মানুষের মিলনমেলাও। যেখানে প্রাণ, সেখানে আনন্দ থাকবেই। মেলায় এসে যেন দর্শনার্থীরা বিরক্তভাব প্রকাশ করতে না পারেন, সে জন্য আমরা নানা আয়োজন রেখেছি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকছে এবারের মেলায়।
এএসএস/এসআর/এমএআর/এএইচ/আরআইপি