বিদায়ী বছরে রেমিট্যান্স কমেছে ৮ কোটি মার্কিন ডলার
প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। বিদায়ী বছরেও নিম্নগতি অব্যাহত ছিল। ২০১৭ সালে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। যা ২০১৬ সালে ছিল ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ৮ কোটি মার্কিন ডলার বা দশমিক ৫৮ শতাংশ। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬৫৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে বছরের হিসাবে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে। ২০১৩ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৩৮৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের রেমিট্যান্সের অর্থ দেশে পাঠিয়েছিলেন। পরের বছর ২০১৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৩৭১ কোটি ডলারে। এর পর ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ধারাবাহিকভাবে কমে প্রবাসী আয়। ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ভলো খবর নয়। বেশ কয়েকটি কারণে রেমিট্যান্স কমছে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। অর্থাৎ আয় কমে যাওয়া রেমিট্যান্স পাঠানো কমে গেছে। এছাড়াও হুণ্ডির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে।
রেমিট্যান্স কমার বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাড়ছে হুণ্ডি সিন্ডিকেট। বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ, ইউ ক্যাশসহ অন্যান্য এমএফএস সার্ভিসের এজেন্টদের মাধ্যমে সারাদেশে হুণ্ডির এ সিন্ডিকেট কাজ করছে। এতে করে দ্রুত বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয়ে ধস নেমেছে। এছাড়াও ব্যাংকের শাখার দূরত্ব, অর্থ পেতে সময়ক্ষেপণ, ব্যাংকারদের সদাচারণের অভাব ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে রেমিট্যান্স কমেছে।
গত কয়েক বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহে শ্লথ প্রবৃদ্ধি স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, অস্বীকার কারার উপায় নেই যে, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ অবৈধভাবে দেশে আসছে। হুণ্ডি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন উপায়ে এটিকে কমিয়ে আনতে হবে। সে জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা বাস্তবায়নে অবৈধ চ্যানেলে লেনদেন বন্ধ করতে হবে বলে জানান তিনি।
হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৬ কোটি ডলার। যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। তবে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের চেয়ে ডিসেম্বর মাসে ৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স কমেছে। নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স আসে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এর আগে অক্টোবরে যা ছিল ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। যা তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬১৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৭৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।
এ দিকে ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৮৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১ কোটি ২২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বরাবরের মতই বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে। ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ২৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৮১ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার এবং জনতার মাধ্যমে ৮ কোটি ৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে।
এসআই/এআরএস/এমএস