অবশেষে মৃত ১২০ শ্রমিকের বীমার টাকা দিল পদ্মা লাইফ
অবশেষে সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন কারখানার মৃত ১২০ শ্রমিকের জীবন বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করেছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে পদ্মা লাইফ টাওয়ারে অনুষ্ঠিত দু পক্ষের বৈঠকে বীমা দাবিবাবদ দুই কোটি ৪০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। পদ্মা ইসলামী লাইফ ও বিকেএমইএর মধ্যে অনুষ্ঠিত গ্রুপ বীমা চুক্তি মোতাবেক এসব দাবি পরিশোধ করা হয়।
তবে এর আগে মৃত শ্রমিকের দাবির টাকা পরিশোধ না করে নানা টালবাহানা করতে থাকে পদ্মা ইসলামী লাইফ। বিকেএমইএর মৃত ১৫৫ শ্রমিকের বীমা দাবির টাকা না পাওয়ার বিষয়ে জাগো নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে বীমা কোম্পানিটিকে শোকজ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এর আগে মৃত শ্রমকিদের পরিবারকে বীমা দাবির টাকা আদায় করে দিতে দুই বছর ধরে পদ্মা লাইফে একাধিকবার ধর্ণা দেয় বিকেএমইএ। কিন্তু তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় গত ১৮ জুলাই বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর কাছে অভিযোগ করে সংগঠনটি। এ ক্ষেত্রে বিকেএমইএর বীমা দাবি আদায়ে কনসালটেন্টের দায়িত্বে ছিল ইন্স্যুরেন্স কনসালটেন্ট বিডি।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পদ্মা ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান ডা. জাফর উল্লাহ, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দীন, বিকেএমইএর দ্বিতীয় সহ-সভাপতি ফজলে শামীম, সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির শিল্পী, জিএম ফারুক, ইন্স্যুরেন্স কনসালটেন্ট বিডি'র সিইও মোস্তাফিজুর রহমান টুংকু প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে বীমা চুক্তির মাধ্যমে বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত সব ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শ্রমিকদের জীবন গ্রুপ বীমার আওতাভুক্ত হয়, যা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এরপর ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি আরেকটি চুক্তি করা হয়, যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর।
উভয় বীমা চুক্তির শর্ত অনুসারে, বিকেএইএর প্রতিটি সদস্য কারখানার জন্য বছরে সর্বোচ্চ ২০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হলে এই দাবি পরিশোধযোগ্য। এক্ষেত্রে যেকোনো সদস্যের যে কোনো প্রকার মৃত্যুতে দুই লাখ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। দুর্ঘটনার কারণে পঙ্গুত্ববরণ করলেও একই সুবিধা প্রদান করা হবে। তবে ঘোষিত বা অঘোষিত যুদ্ধ এবং আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুকে বীমার আওতার বাইরে রাখা হয়।
যেসকল কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শ্রমিক বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত নিটওয়ার ফ্যাক্টরির অধীনে পূর্ণকালীন চাকরিতে নিয়োজিত, সুস্থ এবং যাদের বয়স পরবর্তী জন্মদিনে ৬০ বছর উত্তীর্ণ হবে কেবল তাদের জীবন এই চুক্তিনামার আওতাভুক্ত রাখা হয়। তবে কোনো সদস্যের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চুক্তিনামার আওতায় আসবে না বলে বীমা চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বীমা চুক্তির শর্ত অনুসারে, বিকেএমইএর সদস্য কারখানায় চাকুরিরত কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে সেই শ্রমিক বীমার টাকা পাবে। এক্ষেত্রে পদ্মা ইসলামী লাইফের কাছে জমা করা সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিক তালিকায় মৃত শ্রমিকের নাম থাকা বাধ্যতামূলক। শ্রমিকদের মৃত্যু দাবি উত্থাপন করার পর ১৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করা হবে বলেও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তবে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর ১৫৫ শ্রমিকের মৃত্যু দাবি উত্থাপিত হলে দাবির টাকা পরিশোধ না করে নানা টালবাহানা করতে থাকে পদ্মা লাইফ।
এমএএস/জেডএ/আইআই