পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পথে


প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ০৫ জুলাই ২০১৫

ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পচনশীল পণ্য আমদানি অনেকাংশে কমে গেছে। সীমান্তে ট্রাকজট, বেনাপোল কাস্টমসের নিত্য নতুন আইন প্রয়োগ, হয়রানি ও অতিরিক্ত খরচের কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন থাকার পরও আমদানিকারকরা বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি না করে ২০০ মাইল দূরে ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি করছে।

ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ২শ’ থেকে আড়াইশ’ ট্রাক পেয়াজ আমদানি হলেও বেনাপোল দিয়ে ১০ ট্রাকও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। এর ফলে এ খাত থেকে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ১৭৫ মার্কিন ডলার বাড়িয়ে দেয়ায় রমজানের এই সময়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা। শুক্রবার ভারতের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (ন্যাফেড) প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ১৭৫ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪৩০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। রমজানে যখন পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে তখন ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে বলে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অর্থাৎ জুলাই, ২০১৪ থেকে জুন, ২০১৫ পর্যন্ত বেনাপোল দিয়ে মাত্র ১৪ হাজার ৮শ’ ৭৬ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ৩২ মেট্রিক টন, আগস্ট মাসে ৪৮৫ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বর মাসে ১০৫ মেট্রিক টন, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। ডিসেম্বর মাসে আমদানি হয় ৪০ মেট্রিক টন।

এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এক হাজার ২১৮ মেট্রিক টন, ফেব্রুয়ারিতে ৮২৪৭ মেট্রিক টন, মার্চে মাসে তিন হাজার ৭০৪ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, এপ্রিলে ৮৬৩ দশমিক ৯৭ মেট্রিক টন, মে মাসে আমদানি হয় মাত্র ৪০ মেট্রিক টন, জুন মাসে কোনো পেঁয়াজ আসেনি। আর নতুন অর্থবছরের চার দিনে (জুলাই ১, ২, ৪ ও ৫) ১৪১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

বেনাপোলের কাঁচামালের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের মালিক এমএম আলম জানান, ভারত সীমান্তে ট্রাকজট, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পচনশীল পণ্য হিসেবে একটুও ছাড় না দেয়া, ভোমরার চেয়ে খরচ বেশির কারণে আমদানিকারকরা এ পথে পেঁয়াজ আমদানিতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।

তিনি আরো বলেন, শুধু পেঁয়াজ নয় অন্যান্য কাঁচামাল যেমন বড়ই, আপেল, নাশপাতি, কমলালেবু, আঙ্গুর, জিরা আগে বেনাপোল দিয়ে প্রচুর পরিমাণে আমদানি হতো। কিন্তু বর্তমানে এসব পণ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে না। তারপরও পথে পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হয়রানি তো আছেই।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের রেভিনিউ অফিসার হাসানুজ্জামান জানান, এ বন্দর দিয়ে কেন আমদানিকারকরা কাঁচামাল আমদানি করছেন না এটা আমার জানা নেই। আমরা দ্রুততার সঙ্গে এসব পণ্য শুল্কায়ন করে ছাড় দিচ্ছি। অন্য কোনো কারণে তারা বেনাপোল থেকে আমদানি না করে ভোমরা দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করছে।

ভারতে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো সম্পর্কে যশোরের আমদানিকারক আহমেদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক তুহিন সাহা বলেন, ২৫৫ ডলার মূল্যে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বন্দরেই প্রতি কেজির দাম প্রকার ভেদে ২২/২৫ টাকা পড়েছিল। নতুন করে ৪৩০ ডলার মূল্যে আমদানি করলে কেজি প্রতি দাম পড়বে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম এমনিতেই অস্থিতিশীল। এখন দেশি পেঁয়াজের বাজার আবারো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খুলনার পেঁয়াজ আমদানিকারক মিল্টন সাহা বলেন, ভারত সরকার দ্বিতীয় দফা দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের আমদানি ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। যার প্রভাব দেশের পেঁয়াজ বাজারে গিয়ে পড়বে। রমজান শুরুর আগে গত মাসের শেষ দিকে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়ে যায়।

ভারতের রফতানিকারকরা বলছেন, তাদের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা ঠেকাতে রফতানি মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াড়িং স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, গত মাস থেকে ভারতে পেঁয়াজের সংকট চলছিল।

দক্ষিণ ভারতের নতুন পেঁয়াজের আগমনও পেঁয়াজের মূল্য কমাতে পারেনি। ফলে রফতানি নিরুৎসাহিত করে ভারতের স্থানীয় বাজার ঠিক রাখতেই সরকারের পরামর্শে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে ন্যাফেড।

এসএস/বিএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।