ব্যাংক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতরা ছাড় পাবে না : অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যাংক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতরা কেউ কোনোভাবেই ছাড় পাবে না। জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আগে কেউ স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনি। কিন্তু আমরা ছাড় দেইনি। মামলা করেছি, জড়িতদের জেলে নিয়েছি, বিচারের মুখোমুখি করেছি। এরা কেউ ছাড় পাবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুষ্টুলোকেরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য মঞ্জুরি বরাদ্দের ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন।
এ খাতে বরাদ্দের বিরুদ্ধে আটজন সংসদ সদস্য ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। আনা ছাঁটাই প্রস্তাবে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র আটজন সংসদ সদস্য বিভিন্ন ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনায় যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ করেন।
স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ব্যাংকের নাম শুনলে মানুষ আজ আতকে ওঠে। কয়েকটি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি। এই অবস্থা চলতে পারে না। কারা সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার করেছে তাদের নাম প্রকাশ করুন।
হাজী সেলিম বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে কিন্তু কোনো বিচার হয়নি। নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যাংকের টাকা লুটপাটের কোনো হিসাব নেই। খেলাপি ঋণ উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা নেই। ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
এসব সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা-বিশ্বাস অর্জন খুব জরুরি। যখন আস্থার ঘাটতি দেখা যায়, তখনই সমস্যা হয়। সোনালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আগে কেউ স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনি। কিন্তু আমরা ছাড় দেইনি। মামলা করেছি, জড়িতদের জেলে নিয়েছি, বিচারের মুখোমুখি করেছি। এরা কেউ ছাড় পাবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সোনালী ব্যাংকের ঘটনায় একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জেলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, উনি জেলেই মারা গেছেন। আরেকজন এমডি জেলে রয়েছেন। জালিয়াতির আসামিদের ছাড় দেয়া হবে না। কোনো ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেয়, আর যে ঋণ দেয়- তারা সমান দায়ী।
বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনা সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংকের ঘটনায় বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। ওই পর্ষদ বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। পরিচালনা পর্ষদের অনুসন্ধান রিপোর্ট পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুষ্টুলোকেরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় খাতে ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব উপদেশ দেয়া হয়েছে সেগুলো অদ্ভুত উপদেশ। সংসদ সদস্যরা ভুল পরামর্শ দিয়েছেন। তাই এ মন্ত্রণালয়ের টাকা কমাতে পারছি না। আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার বৈষম্যের পরিত্রাণ চাই। এজন্য ২০১০ সালে ৬২ শতাংশ বেতন ভাতা বাড়িয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যে বেতন দিতে যাচ্ছি, তাতে আর জনপ্রশাসনে অসন্তোষ থাকবে না। মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করে। বেসরকারি খাতের সমান বেতন সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো দিনই হয় না।
এইচএস/বিএ/পিআর