চামড়া শিল্প নগরী : তিন বছরের প্রকল্প ১৭ বছর

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৬:৫৭ পিএম, ০৬ নভেম্বর ২০১৭
ফাইল ছবি

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০০৩ সালে। পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অদ্যাবধি তার কাজ শেষ হয়নি। এখন নতুন করে ২০১৯ সাল নাগাদ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। আজ (মঙ্গলবার) মেয়াদবৃদ্ধি সংক্রান্ত এক প্রকল্প সংশোধনী প্রস্তাবনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এ উপস্থপান করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে বিদ্যমান চামড়া শিল্পগুলো বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত। এগুলোর ৯৫ শতাংশ ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ হাজারীবাগ এলাকায় ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত। এ শিল্পগুলোর অধিকাংশই নন-মেকানাইজড বা সেমি-মেকানাইজড পদ্ধতিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে তরল ও কঠিন পরিবেশদূষণকারী বর্জ্য নির্গত হয়। এ ছাড়া শিল্প-কারখানাগুলোতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বর্জ্যব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এতে জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার সাভারে আধুনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাসহ একটি চামড়া শিল্প নগরী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

পরিবেশবান্ধব শিল্প নগরী গড়ে তুলতে ১৫৫টি ট্যানারি সরাতে সরকার ২০০৩ সালের ১৬ আগস্টে সাভারের হেমায়েতপুরের চর নারায়ণপুরে ‘চামড়া শিল্প নগরী ঢাকা’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। তাতে ব্যয় ধরা হয় ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি বিনিয়োগ আরও আকৃষ্ট করা, রফতানি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ট্যানারি শিল্পের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন।

প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণসহ উন্নত মানের প্লট ২০৫টি, অভ্যন্তরীণ রাস্তা প্রায় ৮৪ হাজার বর্গফুট, ড্রেন নির্মাণ ও পানি শোধনাগার প্লান্ট ১টি নির্মাণের কথা বলা হয়। ভূমি উন্নয়ন ধরা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার ১০০ ঘনমিটার। এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চামড়া শিল্প থেকে নির্গত বর্জ্য পরিশোধনের জন্য একটি কমন ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সম্বলিত (সিইটিপি) এসটিপি ও এসপিজিএস স্থাপনের কথা বলা হয়।

কিন্তু গত ১৪ বছর হয়ে গেলেও সব কাজ হয়নি। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। প্রথমে ব্যয় ছাড়া সময় বাড়ানো হয়েছে দুইবার দেড় বছর। পরে আবারও সময় বাড়িয়ে ২০১০ সালের জুনে শেষ করার জন্য অনুমোদন দেয় সরকার। ওই সময়ে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তাতেও ট্যানারি মালিক ও বিসিকের কর্মকর্তাদের ঠেলাঠেলিতে কাজের কাজ হয়নি। আবারও ব্যয় ছাড়া সময় বাড়িয়ে দুই বছর অর্থাৎ ২০১২ সালের জুনে শেষ করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও শেষ হয়নি চামড়া শিল্প নগরী ঢাকা প্রকল্পটি ট্যানারি থেকে সাভারে স্থানান্তরের কাজ।

একে অপরকে দোষারোপ-পাল্টা অভিযোগ চলতেই থাকে। তাই দেশের স্বার্থে ও ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে আবারও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রকল্পটি সংশোধন করে। তাতে এক লাফে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় এক হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর সময় বাড়ানো হয় চার বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে বলা হয়।

জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। এই প্রকল্পের আর্থিক ব্যয় হয়েছে ৫৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৭ শতাংশ। তাই বাকি কাজ শেষ করতে এবার দুই বছর সময় বাড়ানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে। অনেক সময় চলে গেছে। তারপরও সিইটিপি পুরোপুরি চালু হয়নি। সিইটিপির ৪টা মডিউলের মধ্যে ২টা এখনও চালু হয়নি। তারপরও এ পর্যন্ত আমাদের ৬৫টি ট্যানারি সাভারে গেছে। ৩০টি প্রক্রিয়াধীন। এ বছরে ৮০ শতাংশ চলে যাবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের নির্মিত রাস্তাগুলো সংস্কার করা দরকার। আবার সিইটিপির বাকি ২টি মডিউলের কাজও শেষ করা দরকার। এ জন্য প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো দরকার বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাতে আরও দুই বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুনে শেষ করার প্রস্তাব করা হয়। তবে ব্যয় বাড়ানো হয়নি, আগের এক হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকাই রাখা হয়েছে। তা যাচাই-বাচাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে গত ৫ জুনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি-পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আজল প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

এমএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।