তিন ব্যাংককে সংসদীয় কমিটির তলব

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪৬ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

অনিয়ম, দুর্নীতি, পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন ও আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণ জানতে তিনটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) তলব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

ব্যাংক তিনটি হলো- ইসলামী ব্যাংক, দি ফারমার্স ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। আজ রোববার জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২১তম বৈঠকে ব্যাংকগুলোর কাছে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বর্তমান আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, চলতি বছরে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে বড় পরিবর্তন হয়। এজন্য সমালোচনায় পড়ে ব্যাংকটি। বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিযোগকারীরা বিক্রি করে দিচ্ছে ব্যাংকটির শেয়ার। ফলে আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। অন্যদিকে বিধি বহির্ভূতভাবে ঋণ বিতরণ, মালিকদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে বেকায়দায় পড়েছে নতুন প্রজন্মের দি ফারমার্স ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ সমন্বিতভাবে ব্যাংক তিনটি সম্পর্কে সার্বিক পরিস্থিতির সার সংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছেও পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির ২১তম বৈঠকে ‘এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে’ এবং ‘ইসলামী ব্যাংক পরিচালনার নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও শেয়ারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন হয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনা’ শীর্ষক আলোচ্য সূচি রাখা হয়েছে। বৈঠকে তিনটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে উপস্থিত থাকতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশে গত ২৫ অক্টোবর এ চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংক
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংকের চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের মুনাফা কমেছে। অন্যদিকে দেখা দিয়েছে পরিচালন নগদ অর্থের সঙ্কট। চলতি বছরের তিন প্রান্তিকের মধ্যে সর্বশেষ প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে কম মুনাফা হয়েছে। এ প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (সমন্বিত) হয়েছে মাত্র ৩১ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে ১৫ পয়সা।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর কুয়েত ফাইন্যান্স হাউজ ইসলামী ব্যাংকের সব শেয়ার বিক্রি করে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮২টি শেয়ার, যা ব্যাংকের মোট শেয়ারের সোয়া ৫ শতাংশ।

এদিকে কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস সব শেয়ার বিক্রি করলেও ইসলামী ব্যাংকে এখনও দেশটির আরেক প্রতিষ্ঠান দ্য পাবলিক ইনস্টিটিউট ফর সোস্যাল সিকিউরিটির ১০ কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪১ শেয়ার রয়েছে, যা ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ। গুঞ্জন রয়েছে এ শেয়ারও বিক্রি করে দেবে কুয়েত।

সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান (কর্পোরেট স্পন্সর) বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানাটি ১ লাখ শেয়ার বিক্রি করবে।

এসব কারণে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরস্তু খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হামিদ মিঞাকে তলব করেছে।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরস্তু খান জাগো নিউজকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদ, ব্যাংকের শেয়ার ও আর্থিক অবস্থা জানতে সংসদীয় কমিটি ডেকেছে। আমরা এসব বিষয়ে কমিটিকে জানাবো। বিদেশিরা ইসলামী ব্যাংক ছেড়ে দিচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে খবর আসছে তা সঠিক নয়। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো আছে।

দি ফারমার্স ব্যাংক
আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া চতুর্থ প্রজম্মের দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড। পরিচালনা পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতায় অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করছে। ফলে বেড়েই চলছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। তাই অনিয়ম-দুর্নীতির কারণ দর্শাতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম শামীমকে তলব করেছে সংসদীয় কমিটি।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেছে চার হাজার ৮২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৩০৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যার ১৭৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা মন্দ ঋণ।
এ ছাড়া যাত্রা শুরুর দুই বছরের মধ্যে নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ব্যাংকটিতে একাধিকবার বিশেষ পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরও ১৯টি বিশেষ পরিদর্শন করা হয়। এসব পরিদর্শনে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। আর্থিক অনিয়ম ঠেকাতে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ফারমার্স ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) একেএম শামীম জাগো নিউজকে বলেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ডেকেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক
বেনামি শেয়ারহোল্ডার, পর্ষদ সভায় বহিরাগতদের উপস্থিতি, পরিচালকদের স্বাক্ষর জালিয়াতি, তথ্যগোপন করে পরিচালকদের আত্মীয় স্বজনের নামে ঋণ দেয়া ইত্যাদি অভিযোগেরও প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া ব্যাংকটি পরিদর্শনকালে ৭০১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব অভিযোগের বিপরীতে তাদের কেন অপসারণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসৎ আলী ও এমডি দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
৪৬ ধারায় নোটিশ দিয়ে ব্যক্তিগত শুনানি শেষ করেছে এমডিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটি। এর আগে যেসব ব্যাংকের এমডিদের শুনানি করা হয় তাদের দায়িত্ব থেকে অপসারণও করা হয়েছে। এ ছাড়া অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব সেই দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বিষয়ে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য মো. আবদুর রাজ্জাক রোববারের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানসহ কমিটির সদস্য ১০ এমপিকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

এসআই/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।