পেঁয়াজের ঝাঁজ কমছেই না
রাজধানীর বাজারগুলোতে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম। এক মাসের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। শুক্রবার কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এবং খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। আগে ভারত থেকে যে দামে পেঁয়াজ আমদানি করা যেতো, এখন সেই পেঁয়াজ আমদানি করতে প্রায় দ্বিগুণ খরচ পড়ছে। ফলে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশি পেঁয়াজের ওপর। বড় ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিন দিনের টানা বৃষ্টি তাদের দাম বাড়ানোর পথ সুগম করে দিয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা বৃষ্টির অজুহাতে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের অজুহাত বৃষ্টিতে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে এবং কিছু খেতও নষ্ট হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো বৃষ্টিতে পেঁয়াজের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। মূলত আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বড় ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও মান ভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। অর্থৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকার ওপর। আর এক মাসের হিসেবে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকেও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
এ দিকে আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে খোসা ওঠা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগেও এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর সেপ্টেম্বর মাসে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে।
কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. ইয়াসিন বলেন, গত মাসে এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ১৭৫ টাকা দিয়ে। এখন সেই পেঁয়াজের দাম চাচ্ছে ৩২৫ টাকা। এক মাসের ব্যবধানেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
এই ক্রেতা বলেন, আমরা আমজনতা। ব্যবসায়ীদের মনে যখন যা আসে তাই করে, আর আমাদের মুখ বন্ধ করে মেনে নিতে হয়। এর আগে সবজি ও চালের দাম বাড়লো। এখন আবার পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আমরা যারা চাকরি করি তাদের তো আয় বাড়ছে না। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলে একসময় জীবন থমকে যাবে।
খিলগাঁও বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আশেয়া বেগম বলেন, গত সপ্তাহে এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলাম ৫৫ টাকা দিয়ে। এখন সেই পেঁয়াজের দাম চাচ্ছে ৭০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ ছাড়া তো আর কোনো তরকারি রান্না করা যায় না, তাই দাম বাড়লেও কিছু করার নেই। বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।
কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বেশি। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে এই দাম বেড়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা লাগছে। ফলে আমাদের বাজারেও আমাদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আর ভারতে দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশি পণ্যেরও দাম বেড়ে যায়। তাই দেশি পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম যে হারে বেড়েছে, দেশি পেয়াজের দাম সে হারে বাড়েনি।
রামপুরা জামতলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৬০ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে
প্রতি কেজি ৭৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আমাদের কিছুই করার নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।
পাইকাররা কেন দাম বেশি রাখছেন জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন পেঁয়াজের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতেও কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কম। এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
খিলগাঁও তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার বলেন, এক মাস আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩৫ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। আর ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করা আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।
এই ব্যবসায়ী বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বৃষ্টিতে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমদানি খরচ কিছুটা বেড়েছে এটা সত্য, সে জন্য আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়বে কেন? এ সব বড় ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত। বৃষ্টিতে পেঁয়াজের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। অতিরিক্তি মুনাফা করতে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি।
এমএএস/এআরএস/এমএস