উদ্বিগ্ন সুইস ব্যাংকে টাকা পাচারকারীরা


প্রকাশিত: ০৯:০৭ এএম, ২২ জুন ২০১৫

টাকা পাচারের নিরাপদ জায়গা হিসেবে সুইস ব্যাংকের পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সম্প্রতি দেশভিত্তিক জমা হওয়া টাকার হিসেব প্রকাশ করা শুরু করেছে সুইস ব্যাংক। তার ওপর বাংলাদেশ সরকার গত একবছর ধরেই চেষ্টা করছে সেখানে বাংলাদেশ থেকে গচ্ছিত রাখা অর্থের হিসেব নিতে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সরকারি তৎপরতা বেড়ছেও বেশ। ফলে বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। টাকা পাচারকারীরা মনে করছেন, এর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে সরকারের উদ্যোগ এ দফায় যদি সফল হয়, তাহলে আর শেষ রক্ষা হবে না।   
 
সুইস ব্যাংকে হিসাব রয়েছে এমন একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের। এসময় তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে এ বিষয়ে সবশেষ অগ্রগতি জানতে চান। রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী এই ব্যক্তি অতি আগ্রহের সঙ্গে জানতে চান, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ আবারও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে কি না। নিলেও সফল হবে কিনা তা নিয়েও কৌতুহলী তিনি।

গোপনীয়তার শর্তে তিনি জানান, ভারত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে এ বিষয়ে সফল হয়েছে। শেষপর্যন্ত ভারতকে তথ্য দিয়েছে সুইস ব্যাংক। এবার যদি সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশ তথ্য পায় তবে আর রক্ষা নেই। তিনি প্রতিবেদককে জানান, শুনতে পেলাম এবার সরকারের উচ্চ মহল থেকে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন উপদেষ্টাকে অনানুষ্ঠানিক দায়িত্বও দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন সরকারি পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে সুইস ব্যাংকে হিসাবধারীদের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর থেকে বাংলাদেশও এ ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও সুইস ব্যাংক থেকে তথ্য বের করা সহজ নয়। তবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত বলে তা একেবারে অসম্ভবও নয়।

ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই টাকা পাচারের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরাই বেশি জড়িত।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ এবার বিষয়টি দক্ষভাবে এগিয়ে নিতে চায়। এজন্য প্রয়োজনে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। আইনজীবীদের পরামর্শ মতো সুইস ব্যাংক ও দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে। এবার আর গড়পড়তা কোনো তথ্য না চেয়ে সুনির্দিষ্ট করে তথ্য চাওয়া হবে।  

গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশিরা অর্থ জমা রেখেছে ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা (এক ফ্রাঁ ৯০ টাকা হিসেবে)। ২০১৩ সালের জমা তিন হাজার ২৩৬ কোটি টাকা থেকে তা এক হাজার ৩১৮ কোটি টাকা বেশি।

সুইস ব্যাংক কখনোই আমানতকারীদের তথ্য প্রকাশ করে না, টাকার পরিমাণও জানতে দেয় না। ব্যাংক টাকা জমা রাখে একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে। বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে সুইজারল্যান্ড। তবে বিশ্বব্যাপি টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর হওয়ায় সুইস ব্যাংক গত বছর থেকে দেশওয়ারি অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন প্রকাশ।

ধারণা করা হচ্ছে, এবার সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারলে সুইস ব্যাংক হয়তো বাংলাদেশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে।

জানা গেছে, গত বছর সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য বিনিময়ের আগ্রহ দেখিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করতে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ওই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি তারা। হংকং-সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (এইচএসবিসি) মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর একই আগ্রহের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আবারো চিঠি দেয় সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এরও জবাব পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর সূত্র বলছে, সুইস ব্যাংকগুলোতে থাকা বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পেতে এখন পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অনিয়মের জন্য চলমান সরকারি তদন্তের ক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য চাওয়া হলে তা পাওয়া যেতে পারে। অথবা কোনো তালিকা পাঠালেও সে ক্ষেত্রে সুইস ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) থেকে তথ্য মিলতে পারে। সেভাবেই পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে এবার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সুইস ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত টাকার তথ্য-উপাত্ত পেতে হলে আগে তাদের সঙ্গে একটা ভালো সমঝোতা চুক্তি করতে হবে। সেই চুক্তির শর্তের মধ্যে এগুলোকে সুনির্দিষ্ট করতে পারলে তখন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যেতে পারে।

তার মতে, টাকা ফেরত আনার বিষয়টি কঠিন, তবে অসাধ্য নয়।

এসএ/বিএ/পিআর/এসআরজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।