লোকসানি প্রতিষ্ঠানের এত চাহিদা!
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বছরের পর বছর ধরে লোকসানে রয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে কোনো লভ্যাংশই পাচ্ছেন না শেয়ারহোল্ডাররা।
এরপরও একশ্রেণির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ারের দাম।
এ বিষয়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের বারবার সতর্ক করা হলেও তা কাজে আসছে না। উল্টো ডিএসইর সতর্ক বার্তায় কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পালে যেন হাওয়া লাগছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কিছুদিন পর পরই মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ারের দামে অস্বাভাবিক উত্থান ঘটে। সর্বশেষ ২ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ।
এমন দাম বাড়ায় ১৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। জবাবে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কোম্পানির এ তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার বিনিয়োগকারীদের আবারও সতর্ক করেছে ডিএসই।
এর আগে দুই মাস ধরে টানা শেয়ারের দাম বাড়ার কারণে গত জুলাইয়ে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ককে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। সেই নোটিশের জবাবেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে একই তথ্য দেয়া হয়েছিল।
কোম্পানির ওই তথ্যের ভিত্তিতে গত ৫ জুলাই বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে তথ্য প্রকাশ করে ডিএসই।
কিন্তু ডিএসইর সেই সতর্ক বার্তা কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ধারা রুখতে পারেনি। দফায় দফায় দাম বেড়ে ৮ টাকা ৯০ পয়সার শেয়ার গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০ টাকায় পৌঁছায়। অথচ ডিএসই সতর্ক বার্তা দেয়ার সময় দাম ছিল ১২ টাকা ৮০ পয়সা।
তবে ৫ সেপ্টেম্বরের পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে। কমতে কমতে গত ২ অক্টোবর ১৩ টাকা ৯০ পয়সায় নেমে আসে। কিন্তু এরপর আবার অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়তে থাকে। ১২ অক্টোবর দাম ১৭ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছায়। এর প্রেক্ষিতে ডিএসই কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়র বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের ফের সতর্ক করল।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২০১২ সাল থেকেই ঋণাত্মক রয়েছে। অর্থাৎ মুনাফা তো দূরের কথা, গত ৫ বছর ধরে লোকসানে রয়েছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের লোকসান হয়েছে ৪ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা।
আর ২০১৬ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে লোকসান হয় ২ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে লোকসান হয় ১ কোটি ১৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তার আগের প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে লোকসান হয় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসেবে মাস যত গড়াচ্ছে কোম্পানিটির লোকসানের পাল্লা ততই ভারি হচ্ছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। যা ২০১৫ সালে ছিল ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির ইপিএসের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১২ সালে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার প্রতি লোকসান হয় বা ইপিএস ছিল ঋণাত্মক ৬ টাকা ৮৮ পয়সা। এরপর ২০১৩ সালে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা, ২০১৪ সালে ১ টাকা ৭৮ পয়সা, ২০১৫ সালে ২ টাকা ৯ পয়সা এবং ২০১৬ সালে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৭৬ পয়সা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
এমএএস/এমএমজেড/আইআই