পুঁজিবাজারে বিদেশিদের আগ্রহ বেড়েছে : বিএসইসি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৬ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৭

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরবর্তী গন্তব্য হলো বাংলাদেশ। এখন পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেশি।

শনিবার রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে ‘প্রমোটিং ইনভেস্টর প্রোটেকশন ইন বাংলাদেশ থ্রো গুড গভর্নেন্স অ্যান্ড রেগুলেটরি মেজারস’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বিআইসিএম।

বিএসইসি’র চেয়ারম্যান বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ওপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ার কারণ হিসেবে বলেন, ‘অনেকে অনুধাবন করেছেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে সেখানে যে অর্থের দরকার তার প্রধান সোর্স হবে পুঁজিবাজার। সরকার পুঁজিবাজারকে উন্নত করার চেষ্টায় আছে, যাতে এখান থেকে অনেক বিনিয়োগ আসে।’

‘সরকার মনে করে, দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদের অর্থ সরবরাহের সব থেকে ভালো জায়গা পুঁজিবাজার। আমরা যদি পদ্মা সেতুর মতো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিংবা বড় বড় কেন্দ্র খোলার জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সরবরাহ করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে’ বলেন খায়রুল হোসেন।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রধান চালক। টাকা বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন। বিনিয়োগের জন্য যেমন পুঁজির প্রয়োজন, তেমনি এই পুঁজি যেকোনা মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে, যদি বিনিয়োগ সুরক্ষা করা না যায়। কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে, কখন বিনিয়োগ করতে হবে, কাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে, কোম্পানির লভ্যাংশের চিত্র কী- বিনিয়োগকারীদের সবকিছুই পর্যালোচনা করতে হবে।

‘বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন’ উল্লেখ করে খায়রুল হোসেন বলেন, আমাদের মার্কেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম। ভারতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের ওপরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। আমাদের এখানে মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশের মতো। কাজেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

সেমিনারের প্যানেলিস্ট আলোচক হিসেবে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, আমাদের দেশে ভালো স্টক খুব কম। যে কারণে অল্প কিছু কোম্পানিতে বিনিয়োগ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এতে অনেক শেয়ার দাম অভার প্রাইজড (অতিমূল্যায়িত) হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে।

তিনি বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি বা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদ ভালোভাবে বোঝা সম্ভব না। তাই বাইরের দেশে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে। কিন্তু আমাদের দেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অবস্থা ভালো না। ফান্ড ম্যানেজারদের ব্যর্থতায় অনেক ভালো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে গেছে।

‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সব থেকে ভালো পারফর্ম করেছে’ উল্লেখ করে বিএসইসির সাবেক এই কমিশনার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পুঁজিবাজারের ২৩ শতাংশ গ্রোথ হয়েছে। ভারত, ভিয়েতনামসহ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সব থেকে ভালো পারফর্ম করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনেক নিয়মনীতির কারণে এখন ইনসাইডার ট্রেডিং প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

বিআইসিএম’র নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জোয়ারদারের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা, ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী প্রমুখ। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইসিএম’র সহযোগী অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র দেবনাথ।

মূল প্রবন্ধে নিতাই চন্দ্র বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর কিছু অধিকার ও ঝুঁকি থাকে। দেশের বিদ্যমান আইনেও বিনিয়োগকারীদের অধিকারের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা তাদের অধিকার ও ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন নয়। তাদের সচেতন করতে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এমএএস/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।