চালের দামের প্রভাব সবজি-মাছেও

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৬:২৭ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৭
ফাইল ছবি

কয়েকদিনে দাম কিছুটা কমলেও এখনও চড়া মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে চাল। চালের বাজারের অস্থিরতায় সাধারণ মানুষ চিড়াচ্যাপ্টা। নতুন করে এবার চালের উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়েছে সবজি ও মাছের ওপর। কেননা গত এক সপ্তাহে হাতে গোনা দু একটি সবজি ছাড়া সবগুলোর দাম বেড়েছে।

একইসঙ্গে বাজারে ইলিশ না থাকায় দাম বেড়েছে সবধরনের মাছের। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি আড়তে সবজির সরবরাহ কমেছে, ফলে খুচরাতে এর প্রভাব পড়েছে।

মাছের দাম আগেও বেশি ছিল মাঝে ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এখন আবার বাড়ছে, এটা স্বাভাবিক। নিত্যপণ্যের এই ব্যাপক দরবৃদ্ধির প্রভাবে বেকায়দায় পড়েছে রাজধানীবাসী। সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। এদের অনেকেই দরাদরি করতে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতেও জড়িয়ে পড়ছেন। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারাও নিরুপায়। কেননা বেশি হলে বিক্রিও বেশি দামেই করতে হবে।

শনিবার মিরপুরের একটি খুচরা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, কোনো সবজির দাম কম নয়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচেরে দাম। আর অন্য যে কোনো সবজি কেজি প্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

কারণ জানতে চাইলে বাজারের সবজি বিক্রেতা এখলাস উদ্দিন বলেন, কারওয়ান বাজারে মাল (পণ্য) নেই। যে মাল গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা, এ সপ্তাহে সেটা ৪৪-৪৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর কাঁচামরিচ কিনতে গেলে তো পকেটে টাকাই থাকে না।

তিনি বলেন, দাম বাড়াতে আমাদেরও ক্ষতি। বিক্রি কম হয়। চালান ওঠে না।

বাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ২২-২৬ টাকায়। একইভাবে প্রতি কেজি বরবটি ৬০-৬২, কাঁকরোল ৫৫-৬০, ঢেঁড়স ৫০-৫৫ ও শিম ১৩০ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দরবৃদ্ধিতে সবার উপরে রয়েছে কাঁচামরিচ। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে কোথাও কোথাও প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন বিক্রেতারা। এছাড়া প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, করলা ৬০, টমেটো ১৪০, ধুন্দুল ৪০ ও প্রতি কেজি মুলা ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া লাউ প্রতি পিস ৩০-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০, লালশাক প্রতি আঁটি ৩০, ডাঁটাশাক ৩০, কলমিশাক ২০, পুঁইশাক ৬০ ও পাটশাক ১৫ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজার করতে আসা জাকির বলেন, কি কিনবো। কোনোভাবেই বাজেট কুলানো যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম বেশি। শুধু কী তাই, বাচ্চাদের খাবারের দামও বেড়েছে। আমরা পড়ছি গ্যাড়াকলে। না, শান্তিমতো থাকতে পারছি, না আয় বাড়াতে পারছি। কেউ তো দেখার নাই। উপরওয়ালা যদি সহায় হন- বলে এই ক্ষুদে ব্যবসায়ী।

তবে সপ্তাহ ব্যবধানে পটোলের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা। খুচরা বাজারে পটোল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

অন্যদিকে সপ্তাহজুড়ে মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫-৪০ ও দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকায়। একইভাবে প্রতি কেজি রসুন ও আদা ৮০-১২০ এবং শুকনা মরিচ ১৭০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মিরপুরের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী আলিম বলেন, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন আড়ত ও মোকাম থেকে সবজির সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবজি ওইসব আড়ত ও মোকামেও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাবে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোয় প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে।

জানা গেছে, প্রজনন মৌসুমের কারণে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশ ধরা ও বিপণনের ওপর চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এর প্রভাবে বাজারে ইলিশের

দাম তো বেড়েছেই, সঙ্গে বেড়েছে অন্য মাছের দামও। বাজারে এখন প্রতি কেজি বড় আকারের ইলিশ (৮০০ গ্রামের উপরে) দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রায় মাসখানেক ধরে তুলনামূলক সস্তায় থাকা ছোট আকারের ইলিশের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা। বর্তমানে ছোট আকারের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকার মধ্যে।

একইভাবে প্রতিকেজি রুই ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ ও শিং ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সপ্তাহজুড়ে মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। রাজধানীতে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৪৮০-৫০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া প্রতিকেজি খাসি ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। কেজি প্রতি ৫ টাকা কমে এখন ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩০ ও দেশি-মুরগি ৩৭০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এমএ/একে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।