দুর্যোগে ব্যাংকিং খাতে ৭ ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২৩ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৭

বড় ধরনের দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্যাংকগুলো। প্রায়ই সুদ মওকুফ, ঋণ পুনঃতফসিলসহ সাত ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এ খাত। এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় এখনই ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সেমিনারে ‘অ্যাড্রেসিং ডিজাস্টার রিস্ক বাই ব্যাংকস : বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বড় ধরনের দুর্যোগে সাত ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয় ব্যাংকিং খাত। এগুলো হলো- ঋণ, নিরাপত্তা, তারল্য, সুদের হার, দক্ষতা সঙ্কট, সুনাম ও সামষ্টিক অর্থনীতি। এজন্য ভবিষ্যত দুর্যোগ মোকাবেলায় এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

সেমিনারে ‘ইমপ্যাক্ট অব অ্যাডোপটিং ব্যাসেল অ্যাকর্ড ইন দ্য ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আরও একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও কনসালটেন্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি।

‘অ্যাড্রেসিং ডিজাস্টার রিস্ক বাই ব্যাংকস : বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ধরনের দুর্যোগে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে তার তথ্য ব্যাংকে নেই। ব্যাংকগুলোর এ তথ্য সংরক্ষণে অনীহা। আমানত ও বিনিয়োগ প্রভাব সম্পর্কে ব্যাংকিং খাত কোনো তথ্য সংরক্ষণ করে না।

এতে আরও বলা হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে হবে। ৪৭ শতাংশ ব্যাংকার এমন মত দিয়েছেন। ১৭ শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছেন সচেতনতা প্রয়োজন।

এদিকে ‘ইমপ্যাক্ট অব অ্যাডোপটিং ব্যাসেল অ্যাকর্ড ইন দ্য ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী পুঁজি সংরক্ষণ জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বলেন, দুর্যোগে ব্যাংকিং খাত থমকে যায়। প্রায়ই সুদ মওকুফ, ঋণ পুন:তফসিল করতে হয়। এ কারণে ব্যাংকিং খাত অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়ে। ২০১৫ সালের রাজনৈতিক গোলযোগেও ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিআইবিএম’র সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাসল-৩ বাস্তবায়নে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে সচেতন হতে হবে। বোর্ডকে প্রত্যেকটি ধাপ বোঝানোর দায়িত্ব টপ ম্যানেজমেন্টের।

বিআইবিএম’র সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকিং খাতের কিছু ক্ষেত্রে অস্থিরতা চলছে। হঠাৎ ব্যাংককর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। আবার অন্য খাতের লোকজনকে বড় বেতনে ব্যাংকের সিনিয়র পদে বসানো হচ্ছে। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো নয়।

মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনটা জরুরি। খুব তাড়াহুড়া না করে পরিকল্পনা তৈরি করে ব্যাসেল-৩ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ভালো অবস্থানে ফিরছে। বিডিবিএল ১০ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে সরকারকে। বড় দুর্যোগে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি এড়াতে বীমার আওতায় আনার ওপর জোর দেন তিনি।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম।

এসআই/এএইচ/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।