শেয়ারবাজারে সূচকের বড় লাফ
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার মূল্য সূচকের বড় উত্থান ঘটেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন হওয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। এর মাধ্যমে টানা ১০ কার্যদিবস অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পর ঘুরে দাঁড়ালো শেয়ারবাজার।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৭৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। তবে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কম হয়েছে ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
অপরদিকে সিএসইতে ৬৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। আর আগের দিনের তুলনায় ১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লেনদেন কম হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারের মূল্য সূচকের এমন বড় উত্থান স্বাভাবিক বিষয়। কারণ টানা দশ কার্যদিবস লেনদেন হওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেশ কমে গেছে। এখন এসব শেয়ারের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে বাজারে অবশ্যই সতর্কভাবে বিনিয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, টানা দরপতনের পর মূল্য সূচকের বড় উত্থান কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না। পতনের পর শেয়ারবাজারে উত্থান ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। এর আগে টানা উত্থানের কারণে মাঝে কিছুদিন দরপতন হয়েছে। এখান আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের গুজবে কান না দিয়ে সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করা উচিত।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, দরপতনের পর শেয়ারবাজারে উত্থান ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। কোনো অবস্থাতেই শেয়ারবাজারে টানা উত্থান বা পতন ভালো না। ঈদুল আজহার আগে থেকেই শেয়ারবাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়া, যা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যহত থাকে। যে কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে বাজার ডাউন ট্রেনে ছিল। এখন আবার বাজারে আপার ট্রেন দেখা যাচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ।
তিনি বলেন, দরপতনের সময় দেখা গেছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হলেও ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। যে কারণে সূচকের খুব বেশি পতন ঘটেনি। আর মঙ্গলবার সূচকের বড় উত্থান ঘটেছে কারণ ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য খাতেরও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। পতনের মধ্যেও ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার অর্থ হলো এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আবার আস্থা বাড়ছে। এটা বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ। কারণ আমাদের দেশে অন্য খাতের তুলনায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ভিত বেশ মজবুত।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার সূচকের উত্থানে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। যা লেদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যহত থাকে এবং শেষ ঘণ্টায় লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ে। ফলে সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে দশ কার্যদিবস পর বেড়েছে অপর দুটি সূচক। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪১ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৪০টি (৭৩ শতাংশ) প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ৬৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির দাম। লেনদেন হয়েছে ৮০১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার। এদিন কোম্পানির ৩৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ঢাকা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক এবং এনসিসি ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫১৪ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৭০টির দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে কমেছে ৫৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির দাম।
এমএএস/এএইচ/আইআই