ডিপিএসের জন্য নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক!
‘সাড়ে নয় বছর ডিপিএসের টাকা সরাসরি জমা দিয়েছি। ম্যাচিউরড হতে বাকি মাত্র ছয় মাস। এখন কেন নতুন করে আবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। আমি না খুললে কী হবে?’
ডিপিএসের (ডিপোজিট প্রিমিয়াম স্কিম) টাকা জমা দিতে এসে নতুন করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক- বিষয়টি জানার পর এমন প্রশ্ন রাখেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আজগর হোসেন। সোমবার দুপুরে ঢাকা ব্যাংক, ধানমন্ডি শাখায় ডিপিএসের টাকা জমা দিতে এসে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা তাকে নতুন করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা জানান।
একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন আজগর হোসেন। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করবেন বলেও জানান তিনি।
জবাবে ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, নাগরিক হিসেবে (গ্রাহক) আপনি আদালতে যেতে পারেন; তবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না খুললে ডিপিএসের টাকা জমা নেয়া আমাদের (ব্যাংক) পক্ষে সম্ভব নয়। নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে দুই হাজার টাকা জমা দিতেই হবে।
ডিপিএসের টাকা জমা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক- এমন নির্দেশনায় বিপাকে পড়েছেন আজগর আলীর মতো লাখ লাখ ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী গ্রাহক। জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বহু গ্রাহক হঠাৎ জারি হওয়া এমন নির্দেশনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
তারা জানান, রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি, ছোট-বড় চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, গৃহবধূ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, গার্মেন্টসকর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ভবিষ্যতে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা ডিপিএস হিসাবে জমা করেন। এতদিন তারা ডিপিএস নম্বরে সরাসরি টাকা জমা দিতে পারতেন।
ঢাকা ব্যাংকের এক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রাহকদের কারও কারও বিদেশ চলে যাওয়া এবং ডিপিএস ম্যাচিউরড হওয়ার পর তাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় টাকা স্থানান্তরে জটিলতা দেখা দেয়। গ্রাহকের টাকা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিড়ম্বনার সম্মুখীন হন। অপরদিকে এ টাকা তামাদি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সার্কুলার জারি করতে বাধ্য হয়েছে।
তবে নির্দেশনা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ডিপিএসের জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে; নতুন করে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব কিছু নিয়মনীতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো এটি করে। তবে গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় বা সমস্যার সৃষ্টি হয় এমন কিছু করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলছেন, লাখ লাখ নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হলে প্রতি ছয় মাস অন্তর তিনশ থেকে চারশ টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেয়া হয়। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী লাখ লাখ গ্রাহক। জারি হওয়া এমন নির্দেশনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন তারা।
এমইউ/এমএআর/এমএস