গরিবের হক মেরে বাণিজ্য

মেসবাহুল হক
মেসবাহুল হক মেসবাহুল হক , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৬ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৭
ফাইল ছবি

কোরবানির পশুর চামড়ার দাম গতবারের সমান নির্ধারণ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রী এ দাম ঘোষণা করেন।

অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজার বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে গতবারের তুলনায় কাঁচা চামড়ার দাম বেশি। এমনকি আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা বর্তমানের দামের চেয়েও বর্গফুটে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম।

জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ সাধারণত এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ফলে চামড়ার দাম কমে গেলে দুস্থ-অসহায় মানুষের ভাগে কম পড়বে।

ঘোষণা অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনবেন ৫০-৫৫ টাকায়, ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৪০-৪৫ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ২০-২২ এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় সংগ্রহ করা হবে।

গত বছরও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ টাকায় কিনেছেন। এছাড়া খাসির চামড়া ২০ এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকায় সংগ্রহ করা হয়েছিল।

তাই পর্যবেক্ষক মহলের অভিযোগ, ভারতের চেয়ে পরিকল্পিতভাবে দাম কমিয়ে চামড়া পাচারের সুযোগকে সহজ করা হয়েছে।
চামড়ার দাম না বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, চামড়া শিল্প সাভারে স্থানান্তরের পর এমনিতে মালিকরা চাপে রয়েছেন। এ কারণের অন্য দেশে দাম একটু বেশি হলেও আমরা গতবারের মতোই রেখেছি।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, বর্তমানে বাজারে গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি বর্গফুট ৬০-৭০ টাকায়। আর খাসি ২৫-৩০ টাকায়। খাসির চামড়া যতই ২০ টাকা নির্ধারণ হোক না কেন ৩০ টাকার নিচে এটা বিক্রি হবে না।

কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন ও চাহিদা কমার অজুহাত তুলে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করছেন ট্যানারি মালিক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অথচ খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, আন্তর্জাতিক বাজার বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে গতবারের তুলনায় এবার কাঁচা চামড়ার দাম বেশি। এছাড়া এ দেশের পশুর চামড়ার মান বিশ্বে এক নম্বর হওয়ায় দামও আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক।

ভারতে গরুর চামড়ার মান নিম্নমানের। ভারতে বর্তমানে প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য প্রায় ৯০ টাকা, যা বাংলাদেশের নির্ধারিত দরের প্রায় দ্বিগুণ। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের চামড়ার মান ভালো অথচ দাম অনেক কম থাকায় প্রতি বছরই ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকে।

পাচার ঠেকাতে দেশের ভেতরে কাঁচা চামড়ার দাম না বাড়িয়ে ট্যানারি মালিকরা বরাবরই সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের আরজি জানান। কয়েক বছর ধরে বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তে নজরদারি জোরদার করায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে চামড়া পাচার কমে গেছে। ফলে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাচারের ভয় ব্যবসায়ীদের আগের মতো ভাবায় না।

এ বছর কোরবানির পশুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে গরিব মানুষকে ঠকানো হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সংগঠন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠক করেই এ দর নির্ধারণ করেছে।

এমইউএইচ/এএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।