সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখিয়েছে ওয়াইম্যাক্স

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ২০ আগস্ট ২০১৭

শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের জন্য বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য দিয়ে প্রসপেক্টাস তৈরি করা ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড লিমিটেড হিসাবমান লঙ্ঘন করে সম্পদ ও মুনাফার পরিমাণও বেশি দেখিয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জমা দেয়া প্রতিষ্ঠানটির প্রসপেক্টাসের তথ্য পর্যালোচনা করে বিষয়টি জানা গেছে।

বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (বিএএস)-১৬ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল থাকা সম্পত্তি প্রাচীর, ফ্যাক্টরির ভেতরে রাস্তা, পার্কিং, বাগান ইত্যাদি ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অবচয়যোগ্য সম্পদ।

কিন্তু ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের প্রসপেক্টাসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ওপর অবচয় চার্জ করেনি। এর মাধ্যমে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখান হয়েছে।

এদিকে বিএএস-১২ অনুযায়ী, প্রযোজ্য হলেও ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেফার্ড ট্যাক্স গণনা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি ডেফার্ড ট্যাক্স বাবদ পরবর্তীতে সমন্বয়ও করা হয়নি। এতে বর্তমানে নিট সম্পদের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য প্রকাশ হয়নি।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কাজ করেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পত্তির (প্রাচীর, ফ্যাক্টরির ভেতরে রাস্তা, পার্কিং প্লেস, বাগান ইত্যাদি) ওপর অনেকে অবচয় চার্জ করেন না। এতে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখান হয়। কিন্তু হিসাবমান অনুযায়ী এসব সম্পত্তির ওপর অবচয় চার্জ করতে হয়।

একটি ইস্যু ম্যানেজার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সময় অনেক কোম্পানিই আর্থিক প্রতিবেদন ফুলিয়ে দেখায়। বিশেষ করে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখান গেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যায়। তবে হিসাবমান অনুযায়ী ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অবচয়যোগ্য।

প্রসপেক্টসের তথ্য অনুযায়ী, নোট ২৮-এ ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কর্তৃপক্ষ ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রিস্টেড শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়েছে। তবে রিস্টেড ইপিএস বলতে মোট শেয়ার দিয়ে মুনাফাকে ভাগ করে হিসাব করা বোঝান হয়। ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে রিস্টেড ইপিএস দেখানোর মাধ্যমে বেশি দেখান হয়েছে।

এদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ১৫) ভুল শেয়ারপ্রতি মুনাফা দেখিয়েছে ওয়াইম্যাক্স। এ সময় ইপিএস ৯৩ পয়সার বদলে ৫৩ পয়সা দেখান হয়েছে।

বিএএস-৩৩ অনুযায়ী, শেয়ার ওয়েটেড না করে ভুল ইপিএস দেখান হয়েছে। বিএএস অনুযায়ী, প্রিফারেন্স শেয়ার ও অন্যান্য বিষয় যখন সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর হয়, তখন ডাইলোটেড ইপিএস গণনা করতে হয়। এ জাতীয় কোনও কিছু না ঘটায় ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসে ডাইলুটেড ইপিএস গণনা প্রযোজ্য নয়। তবে কোম্পানিতে ডাইলুটেড ইপিএস অ্যাপলিকেবল বলে প্রসপেক্টাসের ১৩৮ পৃষ্টায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৮ পৃষ্টায় ডাইলুটেড বলে ভুল ইপিএস দেখান হয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস। একই সঙ্গে শ্রমিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলিও দেখান হয়েছে।

কোম্পানিটি ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইনানুযায়ী, ২০১২ সাল পর্যন্ত নিট আয়ের ৫ শতাংশ হারে ফান্ড গঠন এবং বিতরণ কোনোটাই করেনি। ফলে শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর পরের তিন বছর ফান্ড গঠন করা হলেও আইনানুযায়ী বিতরণ হয়নি।

ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসে ২০১৬ সালের ৩০ জুন নিট শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা। তবে এ সম্পদ দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। কারণ এখন কোম্পানির এনএভিপিএস ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা থাকলেও আইপিও পরবর্তীতে এক টাকা ৯২ পয়সা কমে ১২ টাকা ৯৫ পয়সায় নেমে আসবে।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য হলেও শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ‘আর্নিংস বেজড ভ্যালু পার শেয়ার’ পদ্ধতিতে শেয়ারপ্রতি ৩১ টাকা পাওয়ার যোগ্য বলে প্রসপেক্টাসে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তবে কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে এক কোটি পাঁচ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য একটি কোম্পানির সমস্যা থাকলেই শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে আসতে চায়। তবে প্রতিষ্ঠানটি কেন অভিহিত মূল্যে আসছে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ওয়াইম্যাক্সের প্রসপেক্টাসে কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখা হবে। যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ওয়াইম্যাক্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ইকরামুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিএসইসির কাছে জবাবদিহিতা করেই আইপিও’র অনুমোদন পেয়েছি। তবে ফোনে কোনো ব্যাখ্যা দেব না।

এমএএস/এএইচ/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।