কৃষিখাতে বিনিয়োগে অনন্য দৃষ্টান্ত ‘প্রাণ’

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৭

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, প্রাণ একটি বড় ইন্ডাস্ট্রি। দেশের কৃষিখাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। কৃষিখাতে যে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া যায়, কৃষিপণ্য দিয়ে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করা যায় তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছে প্রাণ।

বুধবার রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে গাভী পালন ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে প্রাণ ডেইরির সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ঋণ প্রদান সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আমজাদ খান চৌধুরীর সঙ্গে কিছু স্মরণীয় মুহূর্তের বর্ণনা দেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে সম্পর্কের (আমজাদ খান চৌধুরীর সঙ্গে) শুরু হয়, যখন তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। ওই সময় তাকে বিদায় দিতে গিয়েছিলাম তখনকার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, আমি বহুদিন থেকে অবসরে যেতে চেয়েছিলাম, আজ যাচ্ছি। আপনি যদি আমাদের সময় দেন আপনার সঙ্গে আলোচনা করব।

অর্থমন্ত্রী বলেন, তার এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিতে আগ্রহ ছিল। তিনি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন নিয়ে কথাবার্তা বললেন। ওইদিনের আলোচনায় তিনি আমাকে বললেন এখন আমার সময় হয়েছে। আমি আশা করছি শিগগিরই একটি ইন্ডাস্ট্রি করব। তারপর কোনো এক সমস্যার কারণে তিনি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি করতে পারলেন না।

তারপর একদিন তার সঙ্গে দেখা হলো। আমি তাকে বললাম কী হলো, আপনার এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি কি বাদ দিয়ে দিলেন নাকি? এখন তো আপনি আবাসিক ব্যবসায় চলে গেছেন। তিনি একটি অ্যাপার্টমেন্ট বানিয়েছিলেন। রাজধানীর হাটখোলায়। আমি তখন সরকার থেকে সরে এসেছি। তিনি আমাকে বললেন, একদিন আমার বাসায় আসেন। দুপুরে খাবেন। আপনার সঙ্গে কথা বলব। আমি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম। তারপর গেলাম, তিনি খাওয়ালেন। সেখানে তিনি বলছেন, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রির খুব ইচ্ছা ছিল বহুদিনের। বগুড়ায় আর্মিদের নিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি এখন নিজে কিছু করব। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তিনি তখন করতে পারেননি। কারণ তিনি জমি পাননি। ফলে তার স্বপ্ন সফল করতে পারেননি।

তিনি বললেন, এ অ্যাপার্টমেন্টটা করেছি আবাসনের জন্য নয়, এটি করেছি কোনো মতো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য। এটি আমার স্ত্রীর অবদান, কারণ এটি তার স্ত্রীর জমি ছিল। তিনি বললেন তুমি যেহেতু কিছুই করছ না একটি অ্যাপার্টমেন্ট কর, এতে কিছু আয় রোজগার হবে। এরপর তিনি এগ্রো ব্যবসায় নামেন।

এর কিছুদিন পর তার সঙ্গে দেখা। কিছুক্ষণ কথা বলার সুযোগ হয়। কারণ তার প্রতিবেশী ছিল আমার ভাই। সেই সূত্রে তার সঙ্গে দেখা। তিনি আমাকে বললেন আমি এখন এগ্রো বিজনেসে আছি। ১২ একর জমি আমি নারায়ণগঞ্জে পেয়েছি। সেখানে আমি বিভিন্ন পরীক্ষামূলক সবজি উৎপাদন করছি। দেশের ছোট আকারের ভুট্টা ও শসা তিনি প্রথম উৎপাদন করেন বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আজ সময় পেয়েছি তার সাফল্যের কিছুটা বললাম। এরপরই তার সাফল্য শুরু হয়। এরপর ২০০৯/১০ সালে তিনি আমাকে বললেন হবিগঞ্জে যাওয়ার জন্য। একটি ইন্ডাস্ট্রির স্কেচ করেছেন, এটি উদ্বোধন করার জন্য। তিনি সেখানে বিরাট একটি এলাকা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির স্কেচ করেছেন। আজকে সুযোগ পেলাম এ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলার। তিনি যেটা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সেটা দেশের এগ্রো খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। দেশের এ খাতের পুরো বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ এ ইন্ডাস্ট্রির। এ রকম একটি ইন্ডাস্ট্রি আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজন। কৃষি খাতে মোট বাজেটের দুই শতাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে। এ খাতে অবশ্যই আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যা হোক আস্তে আস্তে হয়তো এটা বাড়বে।

আমরা নিজেকে অবশ্যই ভাগ্যবান বলব। কারণ গত ৮ বছর ধরে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে আছি। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্য। আমরা ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে ৭ শতাংশে পৌঁছেছি। একটা দেশের চরিত্র পরিবর্তন করার জন্য এবং মানুষের ভিশন হাসিল করার জন্য সবচেয়ে বেশি, যা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা। তাহলে এ দেশ উন্নত হতে খুব বেশি সমস্যা হবে না। আমরা গত দুই বছর ধরে সেই পথে আছি। আশা করছি সমস্যা হবে না।

jagonews24

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও বলেন, সম্প্রতি বন্যার কারণে দেশে যে বিপত্তি হচ্ছে, তা খুবই সাময়িক। সরকার অতি সহজেই সংকট মোকাবেলায় সক্ষম হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।অর্থমন্ত্রী বলেন, আকস্মিক বন্যার কারণে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। চালের দাম বেড়ে গেছে। এজন্য সামনে অনেক চাল আমদানি করা হচ্ছে। এতে অনেক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তবে দেশের মানুষের জন্য সরকার উচ্চ ব্যয়েই চাল আমদানি করবে।

প্রাণ একটি বড় ইন্ডাস্ট্রি। দেশের কৃষিখাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য প্রাণকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। কৃষিখাতে যে বিনিয়োগ করে লাভবার হওয়া যায়, কৃষিপণ্য দিয়ে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করা যায় তার চরম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে প্রাণ।

সরকারি ব্যাংক থেকে কৃষক যে সুযোগ-সুবিধা পায় বেসরকারি ব্যাংক থেকে তা পাওয়া যায় না। সোনালী ব্যাংক ঋণ খেলাপি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আমাদের কিছু কষ্ট দিলেও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আনন্দও দেয়। দুগ্ধ উৎপাদনে সোনালী ব্যাংক কৃষকদের ঋণ দেয়ার মতো যে কাজ করছে এতে আমরা খুশি। এ ধরনের কাজই সোনালী ব্যাংক করে। আজকে প্রাণের মাধ্যমে কৃষকরা যে ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে তার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।

সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (কর্পোরেট ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী এবং সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম। চুক্তি অনুযায়ী, প্রাণ ডেইরির তালিকা অনুযায়ী তাদের চুক্তিবদ্ধ খামারিদের স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেবে সোনালী ব্যাংক। একজন খামারি জামানতবিহীন ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। এছাড়া জামানতের বিপরীতে তিন লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হবে। এ ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হবে তিন থেকে পাঁচ বছর।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, প্রাণ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধাসহ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসআই/এমএ/ওআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।