পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির কর ২৫ শতাংশ করা উচিত : শাকিল রিজভী
২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর কর ২৫ শতাংশ করা উচিত। একই সঙ্গে নতুন কোম্পানি আনার জন্য নিবন্ধিত কোম্পানি তুলনায় নিবন্ধিত নয় এমন কোম্পানির কর্পোরেট করের ব্যবধান বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী।
মো. শাকিল রিজভী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক। এছাড়া শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে সম্পৃক্ত আছেন পুঁজিবাজারের সঙ্গে। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে বর্তমান পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ও আসন্ন বাজেটে প্রত্যাশা নিয়ে আলাপ করেন শাকিল রিজভী।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম।
জাগো নিউজ : পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থাকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
শাকিল রিজভী : বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে এক কথায় বলা যায়- ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। অনেক কোম্পানির শেয়ারের দর যৌক্তিক দামের নিচে নেমে গেছে। আবার অনেক শেয়ারের দর যৌক্তিক পর্যায়ে আছে। এমনকি কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর নেট অ্যাসেট ভ্যালুর নিচে আছে। বর্তমানে দেশে অর্থনীতির সব সূচক ভালো। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুঁজিবাজারে কিছুটা আস্থার সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। সিটি নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় পুঁজিবাজারও কিছুটা গতি ফিরে পেয়েছে। এছাড়াও আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারে সম্পর্কে ইতিবাচক হবে বলে আমরা আশা করছি। ফলে আগামী দিনে দেশের পুঁজিবাজার আরো ভালো হবে।
জাগো নিউজ : পুঁজিবাজার উন্নয়নে আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের আপনার প্রত্যাশা কি?
শাকিল রিজভী : আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে পুঁজিবাজারে উন্নয়নে বিনিয়োগকারীদের সার্থে ডিএসইর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, করমুক্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের স্কীমের আওতায় স্টক এক্সচেঞ্জের সংস্কার চলমান রাখতে শতভাগ কর অবকাশ আগামীতে অব্যাহত রাখা।
শেয়ার, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড বা অন্য সিকিউরিটিজ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কর হার দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ০১৫ শতাংশ নির্ধারণের করা।
বাজারে নতুন কোম্পানি আনার জন্য নিবন্ধিত কোম্পানি তুলনায় নিবন্ধিত নয় এমন কোম্পানির কর্পোরেট করের ব্যবধান বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন, পুঁজিবাজাররে সঙ্গে দীর্ঘ দিন সংশ্লিষ্ট এই পরিচালক।
তিনি বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও নিবন্ধিত নয় এমন কম্পানির ওপর ৩৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর বহাল রয়েছে। নতুন অর্থবছরে নিবন্ধিত কম্পানিগুলোর ওপর আরোপিত করহার কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, নিবন্ধিত কম্পানিগুলোর ওপর থেকে করের বোঝা কমালে আরো বেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহ পাবে।
জাগো নিউজ : গত কয়েক সপ্তাহ লেনদেনে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে এর কারণ কি?
শাকিল রিজভী : বেশ কিছুদিন দর পতনের পর দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক কথা বলা ও সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। যার কারণে পুঁজিবাজারে সূচকের পাশাপাশি বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও।
এছাড়াও বেশি দর পতন হওয়ায় বাজারের অনেক কোম্পানির শেয়ার দর কমে গেছে। এখন সেইসব কোম্পানির শেয়ার কিনলে ভালো লাভ হবে মনে করে বিনিয়োগ করছেন বিনিয়োগকারীরা।
জাগো নিউজ : কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত?
শাকিল রিজভী : শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য জানা খুবই জরুরি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিগত ৩ বছরের শেয়ার প্রতি আয়, বিগত বছরগুলোতে কি পরিমাণ লভ্যাংশ প্রদান করেছে ইত্যাদি। পাশাপাশি যে কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করবেন তার পরিচালকরা কি ধরণের তা দেখতে হবে। কারণ পরিচালকরা যদি ভালো না হয় তাহলে সেই কোম্পানি থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাই শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে এগুলো বিবেচনা করা উচিত।
জাগো নিউজ : বাজারের এ নাজুক অবস্থার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু বিধিমালাকে দায়ী করছেন অনেকে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজার এর সংজ্ঞা এবং হিসেব পদ্ধতির ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে অবস্থাটা কি?
শাকিল রিজভী : এটি সত্য যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিমালার কিছু প্রভাব বাজারে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি গঠন করার মাধ্যমে তাদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। একই সঙ্গে ওই সময়ের আইনে যা ছিল সেটি দেখে তারা বাজারে বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানের আইনে এটি বাড়তি বিনিয়োগ। আইন পালন করতে গিয়ে তাদের বাড়তি বিনিয়োগ তুলে নিতে হচ্ছে। এই চাপ বাজারের নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই আমি মনে করি পুঁজিবাজারসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে সময় দেওয়া উচিত। যে সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এটি আরকেটু সময় দেওয়া উচিত।
জাগো নিউজ : বড় ও সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে কি করা প্রয়োজন?
শাকিল রিজভী : বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে কয়েকটি বিষয় জরুরি। প্রথমত ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ও মেয়াদ বেঁধে দেওয়া। ঋণ ও মূলধনের অনুপাত বেঁধে দেওয়া হলে অল্প মূলধনের কোম্পানি বড় ঋণ নিতে পারবে না। আবার মেয়াদ বেঁধে দেওয়া হলে শুধু চলতি মূলধনের জন্য ঋণ পাওয়া যাবে। তখন চাইলে কোনো কোম্পানি ব্যাংক থেকে বড় ঋণ নিতে পারবে না। তাকে পুঁজিবাজারে আসতেই হবে। দ্বিতীয়ত ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ) এবং তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান বাড়ানো।
জাগো নিউজ : প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আসার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন কোন বিষয়ে বেশি নজর দেয়া উচিত মনে করেন?
শাকিল রিজভী : বর্তমানে অনেক কোম্পানি তাদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়ে তালিকাভূক্ত হচ্ছে। এটা এক ধরণের অন্যায়। উদ্যোক্তা যখন শিল্প স্থাপন করেন বা শিল্পের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন, তখন তারা হিসাব করেই ঋণ নেন। কিন্তু তারপরও তারা যখন ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তোলার আবেদন করেন, তখন বিএসইসিকে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে নতুন কোম্পানি বা তালিকাভূক্ত কোম্পানির পরিচালকরা যদি পারিবারিক সদস্য হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও নজরদারি বাড়ানো উচিত।
জাগো নিউজ : বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
শাকিল রিজভী : বর্তমানে বাজার বিনিয়োগ উপযোগী। কারণ বাজারের অনেক শেয়ারের দাম কমে গেছে। যে শেয়ারের দাম বেশি কমে গেছে, সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে কোম্পানির সম্পদ মূল্য, আয়ের অনুপাত, গত কয়েক বছরের লভ্যাংশের ধরণ ও কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জেনে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। তাছাড়া সব মিলিয়ে বর্তমান বাজারের ভবিষ্যৎ ভালো।
জাগো নিউজ : ব্যস্ততার মাঝে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
শাকিল রিজভী : আপনাকেও ধন্যবাদ।
এসআই/আরএস/আরআই