অর্থবছরের শুরুতেই পোশাক রফতানিতে হোঁচট
চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) শুরুতেই রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে হোঁচট খেয়েছে পোশাক খাত। জুলাই মাসে এ খাত থেকে রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি, যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক রফতানি আয়ের ক্ষেত্রেও। ফলে অর্থবছরের প্রথম মাসটিতে রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তৈরি পোশাক খাত বা আরএমজিতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৬০ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছে ২৪৭ কোটি ৯২ লাখ ডলার। অর্থাৎ জুলাই মাসে পোশাক খাতের রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম হয়েছে ১২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।
রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় পোশাক খাতের রফতানি আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগের অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জুলাই মাসের তুলনায় এবার পোশাক খাতের রফতানি আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক শূন্য আট শতাংশ।
তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় আসে নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্টস এই দুটি মাধ্যম থেকে। এর মধ্যে নিটওয়্যার থেকে জুলাই মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩০ কোটি ৪২ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১২৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর ওভেন গার্মেন্টস থেকে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩০ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ তৈরি পোশাক খাতের দুটি মাধ্যমই রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে পোশাক খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সার্বিক রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। জুলাই মাসে রফতানি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩২০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম মাসে রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম এসেছে ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে আগের অর্থবছরের জুলাই মাসের তুলনায় এবার রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ম্যানুফ্যাকচারিং, কেমিক্যাল পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, রাবার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কার্পেট, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল, হোম টেক্সটাইল, সিরামিক পণ্যেও রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
তবে প্রকৌশল পণ্যের রফতানি আয়ে উলম্ফন ঘটেছে। এ খাত থেকে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। এর বিপরীতে জুলাই মাসে আয় হয়েছে ২৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রকৌশল পণ্যের রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি হয়েছে ১৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বা ২০৮ শতাংশ। আর আগের বছরের তুলনায় এ খাত থেকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়ছে ৭০২ শতাংশ।
প্রকৌশল পণ্যের পাশাপাশি হিমায়িত ও জীবিত মাছ, বেড, কিচেন ও টয়লেট সামগ্রী, অন্যান্য ফুটওয়্যার, জাহাজ, নৌকা এবং ভাসমান কাঠামো খাতে জুলাই মাসে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি রফতানি আয় হয়েছে।
এদিকে তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় পতন হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরজুড়ে রফতানি থেকে আয় বাড়ে মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত এক দশকে রফতানি আয়ে এত কম প্রবৃদ্ধি আর হয়নি। এমনকি ২০০১-০২ অর্থবছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি-পরবর্তীও এটা সর্বনিম্ন রফতানি প্রবৃদ্ধি।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ। পরের অর্থবছর ২০০৯-১০ এ রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। রফতানি আয়ে দেশের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয় ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর পরের অর্থবছরগুলোর মধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৯৯, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১১ দশমিক ২২, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৬৯, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী টাকা, ইউরোর অবমূল্যায়ন ও পোশাকের মূল্য কমে যাওয়ায় পোশাক রফতানি কমে গেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমরা পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিগত ১৫ বছরের মধ্যে আমাদের রফতানি আয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার নতুন বাজারে যেখানে বিগত বছরগুলোতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতো, সেখানে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ রফতানি আয় কমেছে। এ পরিস্থিতি মরার ওপর খাড়ার ঘা এর মতো আমাদের সামনে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর সংকট।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি রফতানি কন্টেইনার না নিয়েই জাহাজের বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা এর আগে ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিদেশি ক্রেতারাও সময়মতো পোশাক পাবেন না। আর এর মাশুল দিতে হবে আমাদের রফতানিকারকদের। ক্রেতারা ভারত, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমারের মতো দেশে তাদের অর্ডার সরিয়ে নিতে পারে।
এমএএস/ওআর/এমএস