কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না ১৩ ব্যাংক
ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে রাখার নির্দেশনা থাকলেও অনেক ব্যাংক ধারাবাহিকভাবেই এ নির্দেশনা মানছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুন মাস শেষে ১৩টি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এবারের তালিকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংক স্প্রেডসীমা নির্দেশনা অনুযায়ী নামিয়ে এনেছে। তবে বিদেশি ৫টি ও বেসরকারি ৮টি ব্যাংকের স্প্রেড এ সীমা অতিক্রম করেছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের; যা ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশীয় পয়েন্টে। তবে এ মাসে ব্যাংকিং খাতে গড় স্প্রেড দশমিক শূন্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে। তবে ঋণের সুদ হারের চেয়ে আমানতের সুদহার বেশি করমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে গড় আমানতের সুদহার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। যা আগের মাস মের চেয়ে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। মে মাসে আমানতের সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে মে মাস শেষে ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ঋণের সুদহার বেড়েছে দশমিক ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদ কমায় জুনে গড় স্প্রেড দশমিক এক শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭২ শতাংশীয় পয়েন্ট। যা মে মাসে ছিল ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশীয় পয়েন্ট।
এদিকে, জুনে ব্যাংকের ভোক্তা খাতে বিতরণ করা ঋণ বাদ দিয়েও স্প্রেডের হিসাব দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রেও স্প্রেডসীমা বেশি রয়েছে ১৩টি ব্যাংকের। এ তালিকায় বিদেশি খাতের ৫টি, বেসরকারি খাতের ৮টি ব্যাংকের নাম রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, আমানতের অনুপাতে ঋণের সুদহার আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে, ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকের স্প্রেড সীমা নির্দেশিত শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। তবে কিছু ব্যাংকের স্প্রেড প্রত্যাশিত হারে কমছে না। এর জন্য খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিকেও দায়ী করেছেন তারা।
জানা যায়, গত বছর স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সে নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে এসব ব্যাংক।
জুন মাসে বিদেশি খাতের ৫টি ব্যাংকের স্প্রেড নির্ধারিত সীমার বাইরে রয়েছে। এরমধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সেপ্রড ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশীয় পয়েন্ট, সিটি ব্যাংক এনএ ৫ দশমিক ২৮ শতাংশীয় পয়েন্ট, উরি ব্যাংক ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশীয় পয়েন্ট এবং দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংক কর্পোরেশন লিমিটেডের (এইচএসবিসি) স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশীয় পয়েন্টে।
এ সময়ে বেসরকারি খাতের ৮টি ব্যাংকের স্প্রেডও নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের স্প্রেড ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশীয় পয়েন্ট, যা একক ব্যাংক হিসেবে ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশীয় পয়েন্ট, আইএফআইসির ৫ দশমিক ১৪ শতাংশীয় পয়েন্ট, দ্য সিটি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশীয় পয়েন্ট, উত্তরা ব্যাংকের ৫ দশমিক ২৯ শতাংশীয় পয়েন্ট ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৫ দশমিক ২৮ শতাংশীয় পয়েন্ট, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশীয় পয়েন্ট এবং এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের স্প্রেড ৫ দশমিক ২৮ শতাংশীয় পয়েন্ট স্প্রেড রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, সব ব্যাংকের স্প্রেডসীমা ৫ শতাংশের নিচে আনতে বরাবরই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। তারপরও যেসব ব্যাংক এ নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসআই/বিএ