প্রথম দিনেই বাজিমাত সেই বিবিএস ক্যাবলসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৭

শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর প্রথম দিনই বাজিমাত করেছে বিবিএস ক্যাবলস। সোমবার লেনদেন শুরুর দিনে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন এবং মূল্যবৃদ্ধি উভয় দিক থেকে শীর্ষস্থান দখল করেছে। অথচ শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে এই কোম্পানিটি আর্থিক হিসাবে মিথ্যা ও গড়মিল তথ্য দিয়েছিল।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার ১০ টাকা ফেসভ্যালুর বিবিএস ক্যাবলসের শেয়ারের লেনদেন শুরু হয় ৫১ টাকা দরে, যা দিন শেষে দাঁড়ায় ৯০ টাকায়। প্রথম দিনই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৮০ টাকা বা ৮০০ শতাংশ।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মোট লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে বিবিএস ক্যাবল লেনদেনের শীর্ষ স্থানটিও দখল করে নিয়েছে।

এদিকে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে বিবিএস ক্যাবলের জমা দেয়া প্রসপেক্টাস’র তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ ফ্লো (নগদ প্রবাহ) ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হিসাবে রয়েছে গড়মিল। এছাড়া একই বিষয়ে পৃষ্ঠাভেদে ভিন্ন ভিন্ন তথ্যও প্রকাশ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির সংশোধিত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, ৫৯ পৃষ্ঠায় বিগত ৫ বছরের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইনকাম স্টেটমেন্টে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) গণনায় বিএএস-৩৩ অনুযায়ী, শেয়ার ওয়েটেড করে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ইপিএস হিসাব করা হয়।

কিন্তু ২০১২ সালে ওয়েটেড না করে হিসাব মান লঙ্ঘন করা হয়। ফলে ভুল ইপিএস দেখানো হয়। বছরটিতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২৯ টাকা ১৬ টাকার পরিবর্তে ১৪ টাকা ৩৫ টাকা ইপিএস দেখায়। এছাড়া ২০১৪ সালে ভুলভাবে ২৪ টাকা ৩৩ পয়সার ইপিএস ২৬ টাকা ১৭ পয়সা দেখানো হয়।

নগদ প্রবাহ (ক্যাশ ফ্লো) হিসাবেও মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস ক্যাবলস। হিসাবমান অনুযায়ী, প্রতি বছর ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে শেয়ার প্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হিসাব করা হলেও ২০১২ সালে করা হয়নি। ফলে এ বছর এনওসিএফপিএস ঋণাত্মক ২০৬ টাকা ৬৯ পয়সা হলেও কমিয়ে ১০১ টাকা ৮০ পয়সা দেখানো হয়।

বিএএস-১ অনুযায়ী, তুলনা করার জন্য চলতি বছরের পাশাপাশি আগের বছরের একই সময়ের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু বিবিএস ক্যাবলস কর্তৃপক্ষ গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ‘স্টেটমেন্ট অব চেঞ্জেস ইন ইক্যুইটি’ হিসাবের তথ্য প্রকাশ করলেও তার আগের বছরেরটি করেনি।

শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলনের ৩ মাসের মধ্যে ২০ কোটি টাকা ব্যবহার করা হবে বলে প্রসপেক্টাসের ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে একই বিষয়ে ১৪৬ পৃষ্ঠায় আবার ৬ মাসে ব্যবহারের কথা বলা হয়।

হিসাবমান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডাইলুটেড ইপিএস গণনার কোন সুযোগ নেই। কারণ এখানে কোনো কিছুই কমন শেয়ারে রুপান্তর হয় না। এক্ষেত্রে বিবিএস ক্যাবলসও এর বাহিরে নয়। যে সুযোগ নেই বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রসপেক্টাসের ১৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে।

তবে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবার ডাইলুটেড ইপিএস হিসাবে যথাক্রমে ২ টাকা ৪৬ পয়সা এবং ২ টাকা ১ পয়সা দেখিয়েছে। সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও ভুল ডাইলুটেড ইপিএস দেখিয়েছে। একই সঙ্গে একই বিষয়ে পৃষ্ঠাভেদে ভিন্ন তথ্য দিয়েছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে কমন শেয়ারে কোনো পরিবর্তন না আসায় ওয়েটেড করা লাগেনি বলে প্রসপেক্টাসের ১৬৯ পৃষ্ঠায় তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এ বছর ৯০ কোটি টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে বলে ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শেয়ার ওয়েটেড করেও ইপিএস দেখিয়েছে। এ হিসাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে।

৬০ পৃষ্ঠা অনুযায়ী, ২০১৪ সালে নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ হয়েছে ৮১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এ হিসাবে বছরটিতে শেয়ার প্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়ায় ১ টাকা ৬৪ পয়সা। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিট পরিচালন নগদ প্রবাহে ৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা হিসাবে নিয়ে শেয়ার প্রতি ৭ টাকা ৮৭ টাকা দেখিয়েছে। একই সঙ্গে এই ভুল ৭ টাকা ৮৭ পয়সাকে হিসাবে নিয়ে আবারও ভুল শেয়ার প্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ/ইপিএস দেখায়।

এমএএস/এমআরএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।