আমলাদের ওপর বিজিএমইএ’র ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ এএম, ৩১ জুলাই ২০১৭

সরকারি আমলাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রস্তুতকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. সিদ্দীকুর রহমান বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন হচ্ছে না। এ খাতের উন্নয়ন না হওয়ায় রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই অযোগ্য আমলাদের তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে।

সোমবার বিজিএমইএ’র সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এমন দাবি করেন। চট্টগ্রাম বন্দরে পোশাক শিল্পের আমদানি করা মালামাল খালাস ও রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে জটিলতা এবং পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সরকারি চাকরিজীবীদের উদ্দেশ্যে সিদ্দীকুর রহমান বলেন, দিন দিন আমাদের সদস্যরা লোকসান করবে। শেষ পর্যন্ত তারা জেল খাটবে। আর আপনারা সরকারি চাকরি করে আরামে দিন কাটাবেন। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, অবকাঠামো ঠিক না থাকলে আমরা ব্যবসা করব কিভাবে? আমাদের কাজ ব্যবসা করা। কিন্তু সরকারের তো সকল বিভাগের জন্য লোকবল রয়েছে। তাদের দায়িত্ব তো তাদের পালন করতে হবে।

কোন আমলারা সমস্যা করছেন- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে কারও নাম উল্লেখ না করে সিদ্দীকুর রহমান বলেন, আমরা সকলকেই অযোগ্য বলছি না। যে বিভাগের আমলারা সমস্যা করছেন তা তো এখানে বলাই আছে। আমাদের দাবি, যারা অযোগ্য তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হোক। আর যোগ্য ব্যক্তিদের পদে রাখা হোক।

চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমরা যখন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো আমাদের সামনে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর সংকট। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে এত কঠিন সংকটে এ শিল্প আগে আর পড়েনি।

তিনি বলেন, পোশাক তৈরির উপকরণ বোঝাই জাহাজকে পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পণ্য খালাস করতে না পারায় কন্টেইনার ভাড়া বাবদ বন্দর ও জাহাজ কোম্পানিকে অতিরিক্ত জরিমানা প্রদান করা লাগছে। সময়মতো রফতানিপণ্য আমরা পাঠাতে পারছি না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে আর্থিক মাশুল দিয়ে উড়োজাহাজেও পণ্য রফতানি করছি।

‘টানা আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে বন্দরে জাহাজজট চলমান থাকার পরিস্থিতির সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে জাহাজীকরণ জটিলতা। রফতানি কন্টেইনার না নিয়েই জাহাজের বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা, যা ইতিহাসে কখনোই ঘটেনি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিদেশি ক্রেতারাও সময়মতো পোশাক পাবেন না। আর এর মাশুল দিতে হবে আমাদের, রফতানিকারকদের।’

ক্রেতারা ভারত, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমারের মতো দেশে তাদের অর্ডার সিরিয়ে নিতে পারেন’- বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন সিদ্দীকুর রহমান।

তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজজট কমানোর লক্ষ্যে গিয়ারসেল ভ্যাসেল আসা নিরুৎসাহিত করেছে। নাইট নেভিগেশন চালু করেছে। শিফটিং করে সার্বক্ষণিক হ্যান্ডালিং কর্যক্রম চালু রাখাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারপরও পণ্য খালাস সংকটের সমাধান হয়নি। যেসব জাহাজে ১৫০ থেকে ২০০ এলসিএল কন্টেইনার বেশি থাকে, তা আনস্টাফিং করে খালাস দিতে এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এর মধ্যে ভেসেল বার্থিং-এ সাত-আটদিন এবং পণ্য খালাসে আট-দশদিন বিলম্ব হচ্ছে। আমদানি করা কাঁচামাল পেতে বিলম্ব হওয়ায় আমাদের উৎপাদনে যেতেও দেরি হচ্ছে। অথচ বাজার ধরে রাখতে হলে ক্রেতাদের কাছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেভাবেই হোক পণ্য ফাঠাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের জাহাজজট কমানোর নামে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে নির্ধারিত জাহাজে রফতানিপণ্য তুলে দেয়া নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ দ্বি-মুখী চাপে শিল্প আজ পিষ্ট হতে চলেছে। এতদিন রফতানি পণ্য জাহাজিকরণে বিশেষ ছাড় দেয়া হতো। বিশেষ করে বন্দরে আসার পর কোনো কন্টেইনার জাহাজে তোলা হয়নি- এমন ঘটনা ঘটেনি। এখন এটিও ঘটছে। তাই আমাদের দাবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ সময়মতো রফতানিকারকদের হাতে কাঁচামাল তুলে দিক, বন্দরে রফতানি কন্টেইনার রাখার জায়গা তৈরি করুক। তারপর নিয়মনীতি কঠিন করলে আমাদের আপত্তি থাকবে না।

চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্টের স্বল্পতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কি-গ্যান্ট্রি ক্রেন যেখানে প্রয়োজন ২৬টি সেখানে আছে মাত্র চারটি, এর মধ্যে দুটি বর্তমানে বিকল। একই ভাবে ৫২টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেনের স্থলে আছে ২৩টি, ৩৯টি এম্পটি হ্যান্ডলার’র স্থলে আছে ১৯টি, ১৩০টি ট্রাক্টর ট্রেইলর’র স্থলে আছে ৪৩টি। আর কন্টেইনার ওঠা-নামানোর জন্য যেখানে ২৯৯টি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেখানে আছে ৮৭টি এবং কার্গো হ্যান্ডলিং’র জন্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন ৮৯৫টি কিন্তু আছে মাত্র ২৮৫টি।

বিগত ১৫ বছরের মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পোশাক রফতানি আয়ে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি হয় উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পোশাক রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র দশমিক ২০ শতাংশ। যেখানে বিগত ১০ বছরে গড় অর্জিত প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশের ওপরে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কমেছে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৬ দশমকি ১৭ শতাংশ, কানাডায় ৫ দশমিক ২২ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ব্রাজিলে ১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং নতুন বাজারে এক দশমিক ৫৯ শতাংশ রফতানি আয় কমেছে। যেখানে বিগত বছরগুলোতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতো।

বন্দরে সমস্যা সমাধানের জন্য বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সাতটি প্রস্তাব তুল ধরা হয়। এগুলো হলো- সিসিটি বার্থে বিকল দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন দ্রুত মেরামত করে পূ্র্বের অপারেশন কার্যক্রম শুরু করা, কন্টেইনার হ্যান্ডালিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট জরুরি ভিত্তিতে সরকারিভাবে ক্রয়ের ব্যবস্থা করা অথবা বেসরকরি খাতে থেকে ভাড়া নিয়ে বর্তমান সংকট মোকাবেলা করা, কন্টেইনার ইয়ার্ড সম্প্রসারণে জরুরি ভিত্তিতে ২৬ একর পশ্চাৎ সুবিধাদিসহ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুর করা, পোশাক শিল্পের কাঁচামালবাহী এফসিএল কন্টেইনারগুলো শুল্কায়নসহ একই কর্মদিবসে ডেলিভারির ব্যবস্থা করা, এলসিএল কন্টেইনারের ক্ষেত্রে বেশি ড্রাফটের জাহাজ থেকে কিছু কন্টেইনার ডিসচার্জপূর্বক ওই জাহাজকে কার্গো বার্থে বার্থিং করা, কন্টেইনারবাহী জাহাজগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিংয়ের সুযোগ দেয়া, বন্দরস্থ জেটিতে আরও অধিক সংখ্যক এলসিএল শেড নির্মাণ করা এবং পোশাক শিল্পের এলসিএল পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আনস্ট্যাফিং করে ডেলিভারির ব্যবস্থা করা।

এমএএস/আরএস/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।