রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আধুনিকায়নে অর্থ চান এমডিরা

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৭:২৮ এএম, ২৫ জুলাই ২০১৭

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আধুনিকায়নে সরকারি তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা চেয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা এবং সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকের আধুনিকায়ন জরুরি বলেও মত দেন তারা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তার নিজস্ব অর্থায়নেই ‘আধুনিকায়ন’ প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এ অবস্থায় সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে বৈঠকে বসে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৈঠকে এমডি’রা জানান, ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত প্রকল্পে অর্থ দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ জরুরি, তাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান তারা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্ব ব্যাংক এগিয়ে এলেও ঋণ নেয়নি সরকার। এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি গত ২৪ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিদেশি সংস্থা থেকে কোনো অর্থ না নেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব অর্থায়নে ব্যাংক স্ট্রেনদেনিং বা শক্তিশালীকরণের পরামর্শ দেন তিনি।

একনেক সভার ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ১১ ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে অর্থ মন্ত্রণালয়। সভায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব মো. ইউনুছুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে একনেক সভার সিদ্ধান্ত উপস্থিত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) জানানো হয়। একই সঙ্গে তাদের মতামতও জানতে চাওয়া হয়। সভায় উপস্থিত জনতা, অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংকের এমডিরা নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পক্ষে মত দেন। কিন্তু রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি-সহ অন্যান্যরা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা প্রয়োজন হবে বলে মত দেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভাব্য কারিগরি ও আর্থিক সংশ্লেষ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জরুরিভিত্তিতে প্রস্তাব দিতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কারিগরি বিষয় পর্যালোচনাপূর্বক প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পের কারিগরি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে আইসিটি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আইটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ বিভাগে আলোচনা সভার আয়োজন করতে হবে। তাদের কাছে প্রস্তাব পাওয়ার পরে পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্তকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।

সভায় মো. ইউনুছুর রহমান বলেন, দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। যেহেতু প্রকল্পটি আইটি উন্নয়ন সংক্রান্ত, সেহেতু দেশের আইটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাহ্য করা হলো বিশ্বব্যাংকের অর্থ। পরিকল্পনা কমিশন সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রকল্প প্রস্তুত করবে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করতে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক স্ট্রেনদেনিং’ নামক প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এরপর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ১১টি ব্যাংককে আধুনিকায়নেও এগিয়ে আসে সংস্থাটি। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক সোনালী ব্যাংক, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক এবং বিশেষায়িত বিডিবিএল, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাকাব, কর্মসংস্থান, প্রবাসী কল্যাণ ও আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য প্রায় ১৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের দেয়ার কথা ছিল প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংক আধুনিকায়নে প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নেই করতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করতে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক স্ট্রেনদেনিং’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে কাজ শুরু হয়। মাঝ পথে সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৪১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ছিল সাড়ে ৭৭ শতাংশ। বাকি সাড়ে ২২ শতাংশ দেশীয় অর্থায়নে। যা বাস্তবায়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অটোমেশনের যুগান্তকারী এ কাজ বিদেশিদের সম্পৃক্ততায় বিদেশি সফটওয়ার দিয়েই সম্পন্ন হয়।

কিন্তু সাইবার সিকিউরিটির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেভাবে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। সেই দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার রিজার্ভ চুরি হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও সময় আছে দেশের সরকারি ব্যাংকগুলোকে যুগোপযোগী করা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে অটোমেশনে সম্পৃক্ত করা। তাই সরকারি ১১টি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের আইটি খাতের উন্নয়নে অর্থ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়। ব্যাংকিং খাতের আইটির উন্নয়নে আবারও বিশ্ব ব্যাংক এগিয়ে আসে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালে তারা সম্মতি দেয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ১১টি ব্যাংকের আইটির উন্নয়নে ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব’ (ডিপিপি) তৈরিও করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ধরা হয়েছিল এক হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্পের আওতাভুক্ত সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয় সোনালী ব্যাংকের জন্য ৪৬৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, জনতার জন্য ৩০০ কোটি ২৬ লাখ টাকা, অগ্রণীতে ২৬৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের জন্য ১৭৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) জন্য ৩৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের জন্য ৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জন্য ২১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) জন্য ৭১ কোটি টাকা, কর্মসংস্থান ব্যাংকের জন্য ৭১ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের জন্য সাত কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয় ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

নতুন করে প্রকল্প গ্রহণে এ বরাদ্দে পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

এমএ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।