সাইবার ঝুঁকিতে ব্যাংকগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৭

স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে সাইবার ঝুঁকির বিষয়ে সর্বোচ্চ সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ব্যাংকের সকল কর্মীদের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। 

রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এবং ট্রান্স আইটি সলিউশন’র যৌথ উদ্যোগে মিরপুর বিআইবিএম অডিটরিয়ামে ‘ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রস্তুতি’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ফজলে কবির এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবি চেয়ারম্যান আনিস এ খান, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন এবং ট্রান্স আইটি সলিউশন’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম চৌধুরী (মিজান) বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।

গভর্নর বলেন, সাইবার নিরাপত্তা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। একই সঙ্গে আইটি নিরাপত্তা বিষয়ে একটি গাইড লাইনও প্রস্তুত করেছে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রুবাইয়াত আকবর। এতে বলা হয়, হ্যাকাররা প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও আক্রমণ করে যাচ্ছে। এক হিসেবে শুধু র্যানসমওয়্যার’র কারণেই ২০১৬ সালে ক্ষতি হয়েছে এক বিলিয়ন ডলার। ২০১২ সাল নাগাদ সাইবার অপরাধজনিত ক্ষতির মাত্রা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ছয় ট্রিলিয়ন ডলারে। 

হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার পরিকল্পনা নিয়ে হ্যাকাররা প্রথমেই টার্গেট করে ব্যাংকের সাধারণ কর্মীদের আর তাদের ভুলের ফাঁদে ফেলে গ্রাহক তথ্য চুরি এবং পেমেন্ট সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশের জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এতে আরও বলা হয়, সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মীদের অধিকতর সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। হ্যাকারদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক ও ব্যাংকিং খাত, বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে কর্মরত সবাইকে সাইবার আক্রমণের ধরন সম্পর্কে ধারণালাভ এবং তা প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকা জরুরি।   

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবি চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। ব্যাংকারদের সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।  

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, মাঝারি মাপের প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে অনেক ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। আর বড় ধরনের বিপর্যয় হলে কোনো ব্যাংকেরই সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। কারণ ডাটা সেন্টারের যে ধরনের নিরাপত্তা দরকার তা ব্যাংকগুলোর নেই। 

ট্রান্স আইটি সলিউশনের সিইও আমিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে তথ্য নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুধুমাত্র ঢাকা বা বড় শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি জেলাপর্যায়ে ব্যাংককর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। 

ট্রান্স আইটি’র পক্ষ থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী সেশনে সাম্প্রতিক সময়ের চাঞ্চল্যকর কয়েকটি সাইবার আক্রমণ কিভাবে পরিচালিত হয় তার বাস্তব নমুনা প্রদর্শন করা হয়। অনিরাপদ ওয়াইফাই ব্যবহার করে ল্যাপটপ হ্যাক করার মাধ্যমে হ্যাকাররা কিভাবে আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নেয় তা উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের সামনেই তুলে ধরা হয়।

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, প্রচলিত ধারার চেয়ে ভিন্নধর্মী ট্রেনিংয়ে সাইবার হামলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো চোখের সামনে তুলে ধরে তা থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় দেখান হলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হবে। পরিপূর্ণ সচেতন কর্মীরাই আর্থিক খাতের সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

এমএ/এমএআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।