সাবসিডিয়ারি ছাড়াই ব্যাংকের কাস্টডিয়াল সেবা

মেসবাহুল হক
মেসবাহুল হক মেসবাহুল হক , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৫৫ এএম, ২২ জুলাই ২০১৭

শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে ব্যাংকগুলোর ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্থায়ীভাবে সাবসিডিয়ারি গঠন ছাড়াই সিকিউরিটি কাস্টডিয়াল সেবা দেয়ার অনুমতি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অব্যাহতির সম্মতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবু ফারহ মো. নাছের সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাস্টডিয়াল সেবার মাধ্যমে মূলত ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচা ও সংরক্ষণসহ তাদের গ্রাহকদের এ সংক্রান্ত কার্যসাধন করে থাকে। এর ফলে ব্যাংকগুলো কিছু কমিশন পায়। তাই এ অব্যাহতি স্থায়ী হলে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ যেমন সহজ হবে তেমনি ব্যাংকগুলোর আলাদা সাবসিডিয়ারি গঠন করতে হবে না তাই তাদের পরিচালন ব্যয়ও কমবে।

ব্যাংকের কাজ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নে সহযোগিতা করা, শেয়ারবাজারে ব্যবসা করা নয়- এমন যুক্তি দেখিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্কভাবে এগোনোর পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, এটি হলে আবারও পেছনে ফিরে যাওয়া হবে। ফলে ঝুঁকিও বাড়বে। ব্যাংকের কাজ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নে সহযোগিতা করা। শেয়ারবাজারে ব্যবসা করা নয়। সে কারণে ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজার থেকে পৃথক করা হয়েছে। এখন আইনি অব্যাহতি দিয়ে আবারও শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোকে ঠেলে দেয়া হলে এর ফলাফল ভালো নাও হতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্কভাবে এগোনোর পরামর্শ দেন তিনি।

তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’র পরিচালক শকিল রিজভী বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বাংলাদেশে শেয়ার কিনতে চাইলে তারা সরেজমিন বাংলাদেশে আসে না। তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির কাগজ দেখে বিনিয়োগ করেন। কোনো একটি ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে তারা শেয়ার কেনেন। কিন্তু টাকাটা তার পক্ষ থেকে দেয় কোনো ব্যাংক। এটা ব্যাংকের কাস্টডিয়াল সেবা বলা হয়। এজন্য ব্যাংকগুলো কিছু কমিশনও পায়। কিন্তু ব্যাংকগুলোকে আলাদা সাবসিডিয়ারি গঠন করতে হলে ব্যাংকের খরচ বেড়ে যায়। তাই মনে হয় এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সহজ হবে। আর বাজারে বিনিয়োগ বাড়লে এর স্থিতিশীলতা বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক।

চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক যা বলেন।

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১- এর ৭ ধারার উপ-ধারা (৩) উল্লেখ করে মহাব্যবস্থাপক ব্যাংকিং সচিবকে জানান, এ আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিয়ে পৃথক সাবসিডিয়ারি গঠন করতে হয়। ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজার সম্পৃক্ততা হ্রাসের উদ্দেশ্যে তথা পুঁজিবাজার কার্যক্রমকে বাণিজ্যিক ব্যাংকিং হতে পৃথক করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের আইনে এ সংশোধনী আনা হয়।

সংশোধনীটি আনয়নের পর বিদেশে নিবন্ধিত ব্যাংকের বাংলাদেশস্থ শাখা হিসেবে কার্যরত সিটিব্যাংক এন.এ, এইচএসবিসি, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন- এ চারটি বিদেশি ব্যাংক সাবসিডিয়ারি গঠনের এখতিয়ার রাখে না। বিধায় এ বিষয়ে তাদের প্রধান কার্যালয় তথা তদীয় নিয়ন্ত্রকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীলতা এবং বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের আকার বিবেচনায় সাবসিডিয়ারি গঠনে প্রধান কার্যালয়ের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশে বৈদেশিক পোর্টফোলিও বিনিয়োগের সিংহভাগ এই বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে হয় বিধায় ওই সকল বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রথমপর্যায়ে সরকারের সম্মতিক্রমে ১২১ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ চারটি ব্যাংককে সিকিউরিটি কাস্টডিয়াল সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের ২২ জুলাই থেকে ব্যাংক-কোম্পানি আইনের ৭ ধারার উপ-ধারা (৩) পরিপালন হতে পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ব্র্যাক ব্যাংক লি. এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশীয় ব্যাংকগুলোকেও এরূপ অব্যাহতি প্রদান করে। এই অব্যাহতির সময়সীমা ২০১৮ সালের ২১ জুলাই উত্তীর্ণ হবে।

এ পর্যায়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি সাবিসিডিয়ারি গঠন ব্যতিরেকে ‘সিকিউরিটি কাস্টডিয়াল সেবা’ প্রদান ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখার সুযোগ প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে। অনুমিত হয়, অপরাপর ব্যাংকগুলোও সহসাই অনুরূপ আবেদন জানাবে।

প্রসঙ্গত, যে সকল কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে ইতোপূর্বে ব্যাংকগুলোকে এরূপ অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল তা এখনও বিরাজমান রয়েছে। এছাড়া শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো কাস্টডিয়াল সেবাপ্র্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোনো ঋণ প্রদান করে না। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার (শেয়ারবাজারে নিয়োগসীমা অতিক্রম) সৃষ্টির সুযোগ নেই। এ বিবেচনায় কাস্টডিয়াল সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সাবসিডিয়ারি গঠনের বাধ্যবাধকতা হতে বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংককে স্থায়ী অব্যাহতি প্রদান করার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনাযোগ্য মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে।

তবে স্মরণযোগ্য যে, বিদ্যামান অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হতে এখনও বেশ দেরি আছে বিধায় এখনই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি না করে ২০১৮ সালের ২১ জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা সমীচীন হবে।

এমইউএইচ/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।