তিন কারণে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা যায়নি : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৯ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৭

 

নতুন ভ্যাট আইন ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেছেন, নতুন ভ্যাটের প্লেনে উড়তে পারেনি, মুখ থুবড়ে পড়েছে। মূলত তিন কারণে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা যায়নি। একই সঙ্গে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে সৎ লোকেরা কর দিতে নিরুৎসাহিত হয়। এ জন্য টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন সিপিডির তরফ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে। জাতীয় বাজেট অনুমোদন পরবর্তী পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, তিন কারণে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হয়নি। প্রথমত আইন বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কারিগরি বা টেকনিক্যাল প্রস্তুতির অভাব ছিল। এ কারণে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পর কার ওপরে কতটুকু করভার পড়ছে তার সঠিক হিসাব করা হয়নি। দ্বিতীয়ত যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আইন বাস্তবায়নে যুক্ত থাকে বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে ঐক্যমতের সৃষ্টি করা হয়নি। তৃতীয়ত ভ্যাট আইন ভোক্তার আয়-ব্যয় ওপর প্রভাব কী ফেলবে তার সামাজিক তাৎপর্য অনুধাবন করা হয়নি।

ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি থাকবে মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, আমদানি পর্যায়ে ১ শতাংশ শুল্ক হ্রাস পেতে পারে। অন্যদিকে সম্পূরক শুল্ক অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে প্রয়োগের ফলে আয় বাড়তে পারতে পারে। যেসব সেবা খাতে সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে আদায় করা হয় তাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। এ ঘাটতি পূরণ করতে প্রত্যক্ষ কর, এনবিআর বহির্ভূত কর এবং নন-এনবিআর কর আদায়ের জোর দিতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নতুন ভ্যাট আইনকে টেনে তোলার জন্য এই দুই বছরে আরও বেশি প্রস্ততি নিতে হবে। সে জন্য ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প চালু রাখা ও সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হয়নি। কেন বাস্তবায়ন করা গেল না- তার মূল্যায়ন করে শিক্ষা নেয়া উচিত। ভ্যাট আইন কার্যকর হয়নি বলে ভ্যাট সম্পর্কিত সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে হবে না। দুই বছর পর বা নির্বাচনের পরই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে যেসব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে- সেগুলোকে এগিয়ে নিতে হবে। নির্বাচনের পর যখন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে- তখন সবকিছু যেন নতুন করে শুরু করতে না হয়।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতির ৩টি প্রাক্কলন দিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৪৩ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকতে পারে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ হয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরগুলোতে যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে (১৫ শতাংশ) সে হিসেবে প্রবৃদ্ধি হলে ঘাটতি থাকবে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আর জিডিপির নামিক প্রবৃদ্ধির হার হিসাব করলে ঘাটতি হতে পারে ৫৫ হাজার কোটি টাকা।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, এক-তৃতীয়াংশ মানুষ করযোগ্য আয়ের মধ্যে থাকলেও কর দেয় না। এ জন্য এলাকা ও পেশারভিত্তিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ উচিত। এটি করা না গেলে যারা নিয়মিত কর দেন তাদের ওপর অত্যাচার বেড়ে যাবে। সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এনবিআরকে জনবল দিতে হবে। একই সঙ্গে কর-ভ্যাট আদায়ে হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নেয়া থেকে এনবিআরকে বিরত থাকতে হবে।

এমএ/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।