বৈদেশিক বাণিজ্যে আধিপত্য হারাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাংকিং সেবায় আধিপত্য হারাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটানো হয় ২৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে ২০১১ সালে স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৬৪ শতাংশ আমদানি ব্যয় মিটিয়েছে। আর ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ শতাংশে।
রোববার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ট্রেড সার্ভিস অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক রিভিউ কর্মশালায় এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসাইন, বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ বারিকুল্লাহ এবং ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম প্রমুখ।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানির পাশাপাশি রফতানিতেও আধিপত্য হারাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রফতানি আয় এসেছে ১৮ শতাংশ। সেখানে ২০১৬ সালে ১০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চার কৌশলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ওভার অ্যান্ড আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার অ্যান্ড আন্ডার শিপমেন্ট, পণ্যের মিথ্যা বর্ণনা এবং একাধিক ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বড় ধরনের অর্থপাচার হচ্ছে।
অর্থপাচার প্রতিরোধের নীতিমালা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও এগুলো আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। স্বীকৃত ব্যাংকগুলোকে আমদানি-রফতানি মূল্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হতে হবে, যাতে এ উপায়ে অর্থপাচার না হতে পারে। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তাদের নীতিনির্ধারকের মাধ্যমে অর্থপাচার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ছে।
বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রেড সার্ভিসের মাধ্যমে কেউ যেন ঋণ খেলাপি হতে না পারে সেজন্য যথপোযুক্ত তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচিত হবে অধিক স্বচ্ছতা নির্ধারণের জন্য এসব তথ্য যাচাই করা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও আধুনিক নীতিমালার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বাণিজ্যকেন্দ্রিক অর্থপাচার ক্রমেই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু অর্থপাচার নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্যান্য আর্থিক অপরাধগুলোও ঘটছে। এসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর কড়া নজরদারি করছে। প্রতিদিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন তদারকি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেবায় আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক নীতিমালার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন করেছে। আরও পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে অর্থপাচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
এমএ/এমএমএ/এএইচ/আরআইপি