তেল-গ্যাস অনুসন্ধান : নতুন ৩ কূপ খনন করছে আজারবাইজান


প্রকাশিত: ০২:২৭ পিএম, ১১ জুন ২০১৭

রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের লক্ষ্যে তিন কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭৪ কোটি টাকা) ব্যয়ে নতুন তিনটি কূপ খনন করছে সরকার।

সেমুতাং দক্ষিণ-১, মাদারগঞ্জ-১ ও বেগমগঞ্জ-৪ অনুসন্ধান কূপ খননের জন্যে ইতোমধ্যে বাপেক্স এবং আজারবাইজানের প্রতিষ্ঠান সকার একিউএসের (SOCAR-AQS) মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

চুক্তি মূল্যে কার্যাদেশ প্রদানের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে পাঠিয়েছে।

খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার লক্ষ্যে বাপেক্স ১০৮টি কূপ খননের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৫৩টি অনুসন্ধান কূপ ৩৫টি উন্নয়ন কূপ ও ২০টি ওয়ার্কওভার কূপ রয়েছে।

কিন্তু প্রচলিত ক্রয় সংক্রান্ত বিধি অনুসরণ করে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, আবিষ্কার ও উন্নয়ন করে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে।

এ কারণে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থায়নে ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ সময়ের জন্য বাপেক্স কর্তৃক গৃহীত বিশেষ উদ্যোগের ১০টি প্রকল্প বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০-এর আওতায় অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি) গঠন করা হয়ছে।

এই ১০ প্রকল্পের আওতায় রূপকল্প-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নামক প্রকল্পের অধীনে ২৩টি অনুসন্ধান, দুইটি উন্নয়ন, তিনটি ওয়ার্কওভারসহ মোট ২৮টি কূপ খনন করা হবে।

২৩টি অনুসন্ধান কূপের মধ্যে ১০টি অনুসন্ধান কূপ বাপেক্স নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে খনন করবে এবং অপর ১৩টি অনুসন্ধান কূপ ঠিকাদারের মাধ্যমে টার্নকি ভিত্তিতে খনন করা হবে।

এ লক্ষ্যে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি) ২০১৬ বছরের ১৩ নভেম্বর ১৩তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ১৩টি অনুসন্ধান কূপ তিনটি গ্রুপে বিভক্ত করে প্রতিটি গ্রুপের জন্য ঠিকাদার নির্বাচন করতে পিপিসি কর্তৃক অনুমোদন করা হয়। পরে গ্রুপ-১ এর প্রত্যেক কোম্পানির কাছে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর লিমিটেড টেন্ডারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দরপত্র পাঠানো হয়।

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি গ্রুপভিত্তিক দরপত্রসগুলো উন্মুক্ত করা হয়। দরপত্র খোলার দিনে গ্রুপ-১ এর চারটি অনুসন্ধান কূপের জন্য দুইটি প্রতিষ্ঠান আজারবাইজানের সকার একিউএস এবং উজবেকিস্তানের ইআরআইইএলএল গ্রুপ থেকে দরপ্রস্তাব পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত দরপত্র দুটি কারিগরি উপ-কমিটি মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় ওই প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয় এবং কারিগরিভাবে যোগ্য দরপত্রের পাশাপাশি দরপত্র প্রদানকারি সবার আর্থিক দরপত্র উন্মোচনের সিদ্ধান্ত হয়।

প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি) ১৯ ফেব্রুয়ারির সভায় গ্রহণযোগ্য ও সর্বনিম্ন দরদাতা আজারবাইজানের প্রতিষ্ঠান সকার একিউএসের প্রস্তাবিত দর চার কোটি ৫১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৭ মার্কিন ডলার থেকে কমাতে দরকষাকষি করে এবং নেগোসিয়েটেড মূল্য চার কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের কার্যাদেশ প্রদানের লক্ষ্যে বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়।

এ লক্ষ্যে খসড়া চুক্তি প্রস্তুতের জন্য বাপেক্স পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বাপেক্সের সঙ্গে বিদ্যমান বিভিন্ন চুক্তি এবং পেট্রোবাংলার বিভিন্ন কোম্পানির একই ধরনের চুক্তি পর্যালোচনা করে খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করে। প্রস্তুতকৃত খসড়া চুক্তিটি ২৬ ফেব্রুয়ারি পিপিসির সভায় উপস্থাপিত হলে একজন আইন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে তা অনুমোদন করা হয়।

আইনি মতামতসহ পিপিসির ১২ মার্চের সভায় খসড়া চুক্তিটি উপস্থাপন করা হয় এবং কিছু সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে খসড়া চুক্তিটি বাপেক্স ও আজারবাইজানের প্রতিষ্ঠান সকার একিউএসের মধ্যে অনুস্বাক্ষরিত হয়।

ওই খসড়া অনুস্বাক্ষরিত চুক্তির উপর লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং/মতামত নেয়া হয়।

গ্রুপ-১ এর (সেমুতাং দক্ষিণ-১, বেগমগঞ্জ-৪, মাদারগঞ্জ-১ ও শরীয়তপুর-১) চারটি অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য বাপেক্স এবং সকার একিউএসএসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য নেগোসিয়েটেড মূল্য চার কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারে কার্যাদেশ প্রদানের ক্রয় প্রস্তাব বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০- এর ৭ ধারা অনুযায়ী সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়।

অনুসন্ধান কূপ সেমুতাং দক্ষিণ-১, মাদারগঞ্জ-১ ও বেগমগঞ্জ-৪ ও শরীয়তপুর-১, চারটি পৃথক প্রকল্পের রূপকল্প-২ খনন প্রকল্প, রূপকল্প-৩ খনন প্রকল্প এবং রূপকল্প-৫ খনন প্রকল্প এবং রূপকল্প-৬ খনন প্রকল্পের আওতাভুক্ত।

এদিকে, রূপকল্প-৬ এর অর্থ সংস্থানের যোগান না হওয়ায় ডিপিপি অনুমোদিত হয়নি। তাই ওই প্রকল্পের অধীন শরীয়তপুর-১ অনুসন্ধান কূপ বাদ দিয়ে সকার একিউএসের সঙ্গে চারটি কূপের নেগোশিয়েটেড দরপ্রস্তাব চার কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের আনুপাতিক হারে তিনটি অনুসন্ধান কূপের জন্য তিন কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের চুক্তিমূল্যে কার্যাদেশ প্রদান করে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সার সংক্ষেপটি দেখে ও অনুমোদন করেছেন। এটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপনের জন্য সম্মতি পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ ধরনের একটি প্রস্তাব সরকার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভার কমিটিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সবকিছু নিয়ম মেনে প্রস্তাবনাটি পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কমিটি প্রস্তাবটির অনুমোদন দেবে।

এমইউএইচ/এসআর/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।