সরকারি ব্যাংকগুলোতে থামছে না অনিয়ম


প্রকাশিত: ০৪:৪১ এএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪

সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শন করে ঋণসহ নানা বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনিয়মের বিশদ বর্ণনা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়। এসংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ঋণ নির্বাচন ও বিতরণ না করার পরিপ্রেক্ষিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিরূপ শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত কয়েক বছর যথাযথ ঝুঁকি বিশ্লেষণ ছাড়াই বিপুল পরিমাণ ঋণ মঞ্জুর ও নবায়ন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে একক কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়নি। সার্বিকভাবে এসব ব্যাংকে পরিদর্শনে যেসব অনিয়ম পাওয়া গেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদনের তথ্য খতিয়ে দেখতে অর্থ বিভাগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর হিসাব বইয়ে বিপুল পরিমাণ হদিসবিহীন ঋণের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, ব্যবসায়িক লেনদেন ও পর্যাপ্ত জামানত না নিয়েই ঋণ অনুমোদন ও ঋণ নবায়ন করার মতো অনিয়ম হয়েছে। কিছু অনিয়মের সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাও জড়িত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

পরিদর্শনে দেখা যায়, ঋণ অনুমোদন বিষয়ে শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের ঋণ কমিটির সুস্পষ্ট নেতিবাচক মন্তব্য থাকা সত্ত্বেও পরিচালনা পর্ষদ তা আমলে না নিয়ে অনুমোদন করেছে। ব্যাংকের পর্ষদ বিশেষ বিবেচনায় যে ঋণ অনুমোদন দিয়েছে তার বিপরীতে যে জামানত নেওয়া হয়েছে, তা অতিমূল্যায়িত করা হয়েছে। ঋণ বিতরণের পর ঋণগ্রহীতাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণের অর্থ অন্য খাতে ব্যবহারে সাহায্য করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ অনুমোদনপত্রে সহায়ক জামানত হিসেবে উলি্লখিত জমি মর্টগেজ না করেই কিংবা আংশিক মর্টগেজ করে শর্ত লঙ্ঘন করে ঋণ দেওয়া এবং ইচ্ছামাফিক ঋণের জামানত পরিবর্তন করার মতো অনিয়ম পাওয়া গেছে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও ব্যাংকের নিজস্ব ঋণ নীতিমালা পালন করা হয় না। সিআইবি রিপোর্ট পাওয়ার পর ঋণ অনুমোদনের বিধান থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় না। ক্ষেত্রবিশেষে সিআইবিতে ঋণখেলাপি তালিকাভুক্ত সত্ত্বেও ঋণ দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে সম্পদ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ কার্যকরভাবে ব্যাংকের দায়-সম্পদ ঝুঁকি পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ রাখে না এবং এ সম্পর্কে নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতিরোধে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :পরিচালনা পর্ষদের মুখ্য কর্মসম্পাদন নির্দেশক (কেপিআই) নির্ধারণের জন্য পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিধিবিধান যথাযথ অনুসরণ করা, বৈঠক ছাড়া পরিচালকদের ব্যাংকে না যাওয়ার ইত্যাদি। এতে আরও বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঋণপ্রস্তাব অনুমোদনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি সম্পর্কিত নীতি এবং চাকরিবিধি পরিচালনা পর্ষদ প্রণয়ন ও অনুমোদন করবে। পর্ষদ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করবে এবং প্রণীত নীতিমালা যথাযথভাবে পরিপালিত হচ্ছে কি-না তা পরিবীক্ষণ করবে।

বাংলাদেশ বাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাকরি শেষে একই ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানে ভিন্নভাবে নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। একইভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দীর্ঘদিন একজনকে রাখার প্রবণতা পরিহার করতে বলা হয়েছে। পর্ষদ গঠনে অভিজ্ঞতা, সততা, যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দীর্ঘায়িত না করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশে সিনিয়র ব্যবস্থাপনা পুলে মহাব্যবস্থাপক থেকে উচ্চ পদ পর্যন্ত সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় একই অনুষ্ঠানে একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভ্রমণ পরিহার করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাংকের বার্ষিক বাজেট এবং বিধিবদ্ধ আর্থিক বিবরণীগুলো পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্যাংকের আয়, ব্যয়, তারল্য সংস্থান, মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ, মূলধন পর্যাপ্ততা, নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ এবং আইনগত কার্যক্রমসহ খেলাপি ঋণ আদায়ে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো পর্ষদ পর্যালোচনা করবে।

বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের আওতায় ঋণপ্রস্তাব মূল্যায়ন, ঋণমঞ্জুরি, নবায়ন, আদায়, পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ এবং অবলোপনের নীতি-কৌশল, বিধিব্যবস্থা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।সৌজন্যে: সমকাল

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।