‘সমৃদ্ধি চাই না, স্বস্তি চাই’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্যে আমরা স্বস্তি চাই, সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করতে চাই। আমরা সমৃদ্ধি চাই না, সমৃদ্ধির জন্য যদি আমাদের ঘুম নষ্ট হয় তাহলে সেই সমৃদ্ধি আমরা চাই না’।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কার্যালয়ে ‘নতুন ভ্যাট আইনে ভোক্তাদের লাভ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা করেন।
গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা চাই জীবন ধারণের ব্যয় যাতে না বাড়ে, দ্রব্যমূল্যের দাম যাতে না বাড়ে। বাজেট প্রস্তাবনার পর ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- এ বাজেট পাস হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হবে, জীবন ধারণ ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।’
নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এনবিআর বলছে নতুন ভ্যাট আইনে জীবন ধারণের ব্যয় বাড়বে না। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা নানা
কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়বে। এ আইনে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের কথা বলা হয়েছে। ভ্যাট দেয় ভোক্তা, আদায় করে ব্যবসায়ী। দেখা যাচ্ছে, ভ্যাট ব্যবসায়ী সংগ্রহ করলেও তা সঠিকভাবে সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে না। এসব অসাধু ব্যবসায়ী তো একদিনে সৎ হয়ে যাবে না। যেহেতু বলা হচ্ছে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করবে। সে ভ্যাট কতটুকু রাষ্ট্রীয়
কোষাগারে যাবে তাও সন্দেহ আছে। ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের আশঙ্কা’।
গোলাম রহমান বলেন, ‘১৯৯১ সালে ভ্যাট মাল্টিপল রেট ছিল। এর সুবিধা হলো কিছু পণ্যে দাম বেশি, কিছু পণ্যে কম ছিল। ১৫ ভ্যাট নতুন কিছু নয়। এটা আগেও ছিল এখন এটা সর্বজনীন করা রয়েছে। যেসব পণ্যে ১৫ শতাংশের নিচে ভ্যাট ছিল, সেসব পণ্য অব্যাহতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে মনে হয় না।’
এক্ষেত্রে তিনি চায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘চায়ে আগে ৪ শতাংশ ভ্যাট থাকলেও এখন ১৫ শতাংশ। কিন্তু চা তো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এতে কি দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব ও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না?’
আয়কর বিষয়ে গোলাম রহমান বলেন, দেশে ১২ থেকে ১৩ লাখ মানুষ আয়কর দেয়। ১৬ কোটির মধ্যে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ লাখ লোকের কর দেয়ার ক্ষমতা আছে। এনবিআর করনেট বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তা আরও বাড়ানো দরকার। আয়কর থেকে ১ লাখ কোটি টাকা আদায় করা হলে অবশ্যই সেটা ভালো।
গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যখন এলএনজি আমদানি করা হবে তখন গ্যাসের দাম বাড়বে। কিন্তু তার আগেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া ঠিক না। আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি, আশা করি সুবিচার পাব।
ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যাংকের সুদ যদি হয় ৪ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশ হয়, তাহলে গ্রাহক যে ব্যাংকে অর্থ রাখছে তা কি বাড়ছে? তারপর যদি আবগারি শুল্ক বেশি দিতে হয়, তাহলে গ্রাহক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যাংকে লুটপাট হচ্ছে। যারা ব্যাংকে লুটপাট করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর হচ্ছি না।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এনবিআর সদস্য ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক রেজাউল হাসান, এনবিআর সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহরিয়ার মোল্লা, সিরাজুল ইসলামসহ ক্যাবের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএ/জেডএ/জেআইএম