‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট’ দাবি সঠিক নয় : এমএম আকাশ


প্রকাশিত: ১১:১৭ এএম, ০৭ জুন ২০১৭

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট’ হিসেবে দাবি করাকে মিথ্যা কথা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম.এম. আকাশ। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত এই বাজেট উচ্চাভিলাসী নয়, অবাস্তব। কারণ সরকার বড় বাজেট দিলেও অর্থ ব্যবহার করতে পারে না। সে সক্ষমতাও নেই।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে বাজেটোত্তর মতবিনিময় সভায় অর্থনীতিবিদ এম.এম. আকাশ এসব কথা বলেন। গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন এই মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।

এম.এম. আকাশ বলেন, এটি একটি গতানুগতিক বাজেট। এই বাজেটে মৌলিক কোনো পরিবর্তন নেই। তিনি বলেন, বাজেটে ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রী আর কোনো পথ না পেয়ে বৈদেশিক সহায়তার উপর নির্ভর করেছেন, যা আদৌ বাস্তবসম্মত নয়। ইতিহাসে এতো টাকা কখনো ছাড় হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাজেট সর্বশ্রেষ্ঠ দাবি করা একেবারেই মিথ্যা কথা। অর্থনীতিবিদদের একাংশ এটিকে নিকৃষ্টতম বাজেট বলে দাবি করছেন। আসলে এটি একটি গতানুগতিক বাজেট।

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও ভাগ রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ বলছেন, এটি বড় বাজেট নয়। আবার কেউ বলছেন এটি অবাস্তব বাজেট। খালেদা জিয়ার প্রতিনিধিরা বলছেন এটি ফাঁপানো বাজেট, যা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে মুহিত সাহেবের বক্তব্য হলো, বাজেট তো বড় করতেই হবে। কেননা, বড় বাজেট হলে তা বাস্তবায়নে চাপ থাকবে তাই বেশি বাস্তবায়ন হবে। এসব আলোচনার মধ্যে মূল বিষয় হারিয়ে যাচ্ছে।এম.এম. আকাশ বলেন, মূল বিষয় হলো, এই বাজেট বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা সরকারের আছে কি না? গত মে মাস পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের বাজেটের ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে কোন পণ্যের দাম বাড়বে, আর কোনটির কমবে, সে সম্পর্কে বাজেটে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। একই পণ্যে বিভিন্ন রকম ট্যাক্স ধরা হয়েছে। কাস্টমস ডিউটি, সেলস ট্যাক্স, আবগারি শুল্ক ইত্যাদি যুক্ত হয়েছে। কোনো কোনো পণ্যে দুই ধরনের ভ্যাট ও ট্যাক্স বসছে। আবার কোনো কোনো পণ্যে ছাড় দেয়া হচ্ছে। এর প্রভাব কেমন হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

দৈনিক প্রথম আলোর বিজনেস এডিটর শওকত হোসেন মাসুম বলেন, বাজেটে অপ্রয়োজনীয় কথা বেশি হয়। এসব অপ্রয়োজনীয় কথা না বলে সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরা উচিৎ। তাই বাজেট বক্তব্যের সংস্কার জরুরি। তিনি বলেন, এবারের বাজেটের মূল আলোচ্য বিষয় ভ্যাট আইন। জুলাই থেকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। তাই সেদিকে নজর রাখা উচিৎ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও নিউজ পোর্টাল অর্থসূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, বাজেটে বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে। কেননা, বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার না করাটা এক ধরনের প্রতারণা। বাজেট প্রক্রিয়াকে আরও বেশি গণতান্ত্রিক হতে হবে। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এআর আমান। তিনি বলেন, বাজেটে নারীর কল্যাণে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট সংগ্রহ প্রক্রিয়া মোটেই অনুকূল নয়। ব্যাংক আমানতের উপর আবগারি শুল্ক আরোপ অনৈতিক। বাজেটে কর্পোরেট কর আদায় ও সম্পদ কর আদায়ে সরকারের মনোযোগ খুবই কম। গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সহ প্রধান আসগর আলী সাবরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ।

এমএ/এমএমজেড/ওআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।