রফতানি লক্ষ্যমাত্রায় হোঁচট


প্রকাশিত: ১১:৪৭ এএম, ০৬ জুন ২০১৭

আগের বছরের তুলনায় রফতানিতে প্রবৃদ্ধি সামান্য হলেও অর্থবছরের বেশিরভাগ সময় রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে তিন হাজার ১৭৯ কোটি ডলার আয় হয়েছে। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫৬ কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম।

তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাতের উভেন এবং নিটওয়্যার রফতানি থেকে।

গত ১১ মাসে এ দুই খাতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে রফতানি আয়। এর মধ্যে নিটওয়্যার ২ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং উভেন খাতে কমেছে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।

প্রধান পণ্য রফতানি থেকে আয় কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রফতানি আয়ে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে মোট রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ১৫৬ কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও ১১ মাসে প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়েছে। আগের অর্থবছরে ১১ মাসে রফতানি আয় হয়েছিল তিন হাজার ৬৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার। অর্থাৎ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছে ৩০৬ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ কম।

গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে দুই হাজার ৫৬২ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার।

আলোচিত সময়ে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৭৩৮ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ লক্ষমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে ১৭৫ কোটি ৯৮ লাখ ডলার বা ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে মেয়াদে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে এক হাজার ২৫০ কোটি ডলার এবং উভেন গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে এক হাজার ৩১১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় অর্জিত হয় ২১১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। পরের মাস আগস্টে এ খাত থেকে রফতানি আয় আসে ২৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে ঈদুল আজহার কারণে বেশ কিছুদিন ছুটি থাকায় রফতানি আয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তৈরি পোশাক রফতানি থেকে গত অক্টোবরে ২৫০ কোটি ১৩ লাখ, নভেম্বর মাসে কিছুটা কমে ২৩১ কোটি ৯৯ লাখ ও ডিসেম্বর মাসে ২৫৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার অর্জিত হয়। নতুন বছরের প্রথম মাসে জানুয়ারি মাসে পোশাক রফতানি থেকে আয় এসেছে ২৭০ কোটি ৩৫ লাখ, ফেব্রুয়ারি মাসে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।

মার্চে ২২৯ কোটি এবং এপ্রিলে রফতানি আয় এসেছে ২৭৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্য পণ্যের মধ্যে ১১ মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই সময়ে আয় এসেছে ৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

সরকার পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রতি বিশেষ নজরদারির কারণে এ খাতে ১১ মাসে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে আয় এসেছে ৯০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে অর্থবছরের ১১ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। আয় হয়েছে ১১২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত ১১ মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

এই সময়ে আয় এসেছে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি। এদিকে গত ১১ মাসে কৃষিপণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। এই সময়ে আয় এসেছে ৫১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ কম।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক শিল্প ৩৫ বছরের মধ্যে বর্তমানে সব থেকে সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে। বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।

‘বিশেষ করে ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রভাবের কারণে আমাদের পণ্যের দরপতন হয়েছে। অন্যদিকে গ্যাস সংকটসহ নানাবিধ কারণে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। যার প্রমাণ মিলছে রফতানি আয়ে।’

তাই সংকটময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শ্রমনিবিড় পোশাক শিল্প খাতটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য শিল্পে নিবিড় সহায়তা ও প্রণোদনার বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।

উল্লেখ, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে রফতানি হয়েছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য।

এর উপর ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

এসআই/এমএমএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।