প্রস্তাবিত উৎসে করে রফতানিমুখী শিল্প স্থবির হয়ে পড়বে


প্রকাশিত: ১০:৪০ এএম, ০৫ জুন ২০১৭

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে রফতানিকারকদের সংগঠন (ইএবি)। সংগঠনটি বলছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারে রফতানি খাতের উৎসে কর বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নাই।

যদি প্রস্তাবিত ১ শতাংশ হারে উৎসে কর বাস্তবায়িত হয় তাহলে রফতানিমুখী শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে, শিল্পের সক্ষমতা কমে যাবে। সোমবার এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী সময়োপযোগী একটি বড় আকারের সম্প্রসারিত বাজেট উপস্থাপন করে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। আমরা মনে করি, এই বাজেট বাস্তবায়নে একদিকে সম্ভাবনা যেমন আছে, বিপরীতে আছে বিরাজমান কঠিন বাস্তবতা। এবারের বাজেটে শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে বাজেটে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সার্বিক যোগাযোগ অবগকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষা খাতে অগ্রাধিকার দেয়া।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মেগা প্রকল্পগুলোতে উল্লেখযোগ্য তহবিল বরাদ্দ শিল্পে সহায়ক হবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে উন্নত মানের বাস ও মিনিবাস প্রচলনে প্রণোদনা প্রদানের স্বার্থে অবচয় পরিগণনায় বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২৫ লাখ টাকার যে সর্বোচ্চ ক্রয়সীমা ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আমরা এই পদক্ষেপগুলোর জন্য অর্থমন্ত্রী এবং সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

তবে আমরা গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাজেটে শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো নেয়া হলেও শিল্পের বিকাশের পথে নিরুৎসাহিতকরণ কিছু পদক্ষেপও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-

উৎসে কর : বিস্ময়ের ব্যাপার হলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে তীব্র প্রতিযোগীতামূলক বাজারে রফতানি খাতের উৎসে কর বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নাই। বর্তমানে ১০ আগস্ট, ২০১৬ প্রকাশিত গেজেটে ১ জুলাই, ২০১৬ থেকে ৩০ জুন, ২০১৭ পর্যন্ত ০.৭০% বলবৎ রয়েছে,  যা ১ জুলাই  থেকে ১% হিসাবে উৎসে কর বাস্তবায়িত হবে। যদি ১% হারে উৎসে কর বাস্তবায়িত হয় তাহলে রফতানিমুখি শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে, শিল্পের সক্ষমতা কমে যাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে, বিনিয়োগ তথা কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিশ্চিতভাবে ক্রমাগত নিরুৎসাহিত হয়ে উঠবে। বিষয়টি অর্থমন্ত্রী পুনর্বিবেচনা করবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

সংগঠনটির প্রস্তাব অনুযায়ী উৎসে কর ০.২৫% করা এবং তা আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত বলবৎ রাখা। এছাড়া উৎসে কর কর্তন মিনিমাম ট্যাক্স হিসাবে বিবেচনা না করে পূর্বের ন্যায় চূড়ান্ত কর আদায় হিসাবে গণ্য করা। একই সঙ্গে বস্ত্র খাতের অন্য দুটি উপখাত টেরিটাওয়েল ও হোমটেক্সটাইলের উৎসে কর ০.২৫% করা এবং আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত তা বহাল রাখার দাবি জনায় সংগঠনটি।

কর্পোরেট কর : তৈরি পোশাক খাতের কর্পোরেট কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানি খাতের যৌক্তিক দাবি ছিল পূর্বের ন্যায় ১০ শতাংশ, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানে আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি পেত।

শিল্পের স্বার্থে কর্পোরেট কর ১০ শতাংশ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।

এছারা পরিবেশবান্ধব কারখানার জন্য কর্পোরেট কর ১৪ শতাংশ কমানো হয়েছে। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। তবে কর্পোরেট কর ১ শতাংশ কম কমানোর কারণে মালিকরা পরিবেশবান্ধব কারখানা করতে আগ্রহী হবেন না। পরিবেশবান্ধব কারখানার জন্য কর্পোরেট কর কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ কমানো প্রয়োজন।

অগ্নি-নির্বাপক : বাজেটে যন্ত্রপাতি/উপকরণ ও প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরির উপকরণে ৫% রেয়াতের প্রস্তাব করা হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্পের স্বার্থে পূর্বের ন্যায় ০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।

ভ্যাট : রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ১০০ শতাংশ ভ্যাটমুক্ত। কিন্তু লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কিছু কিছু পার্চেজের ওপরে ভ্যাট প্রয়োগ হয়ে থাকে। লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে একটি এসআরও জারি করে বিষয়টি পরিষ্কারের অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।

মুদ্রানীতি : বাজেটে রফতানি খাতে বিশেষ মুদ্রানীতি সর্ম্পকে কোনো নির্দেশনা নেই। এ ব্যাপারে রফতানিকারকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা বিশেষ মুদ্রানীতি। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর সুবিবেচনায় নেয়ার জন্য অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।

আবগারি শুল্ক : নতুন করে ব্যাংকে টাকা রাখার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে, এটি ব্যতিক্রমধর্মী পশ্চাৎপসরণ। সার্বিকভাবে তো আমানতের ওপর সুদ কমছে। ফলে আমানতকারিরা দু’ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সুদ কমছে, করও বাড়ছে। আমানতকারিরা এখন শঙ্কিত, তারা কোথায় যাবে?

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান : প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উৎসাহিতকরণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো দিকনির্দেশনা পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির মূলমন্ত্র হল বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও  কর্মসংস্থান সৃষ্টি। কিন্তু ২০১৭-১৮ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা পরিলক্ষিত হয়নি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জোরালো দাবি রইল।

তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রণোদনা : বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পোশাক খাতের সুরক্ষায় আগামী দুই বছরের জন্য পোশাক রফতানির এফওবি মূল্যের ওপর প্রচলিত সুবিধাগুলোর অতিরিক্ত ৫% হারে নগদ সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।

রফতানি ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম প্রক্রিয়ার খরচ কমানোর বিষয়টি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে আদৌ উল্লেখ করা হয়নি যা বর্তমানে খুবই গুরুত্ব বহন করে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছে সংগঠনটি।

এমএ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।