ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার ওপর কর বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা


প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ০২ জুন ২০১৭

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এরপর থেকেই দেশব্যাপী শুরু হয়েছে আলোচনা, সমালোচনা, টক শো। শুধু টেলিভিশন ও রেডিওতে নয়, এ টক শো চলছে সর্বত্রই। গণপরিবহন, রাস্তার মোড় ও বিভিন্ন ওলি-গলির মুখে চার-পাঁচজন জটলা বাধলেই আলোচনার মূলবস্তু বাজেট। আর বাজেটের যে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি কথা বলছেন, তা হলো ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার ওপর কর বাড়ানো। এ ইস্যুতে ঢাকাসহ সারাদেশেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ব্যাংকের গ্রাহকরা।

শুক্রবার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে লক্ষ্য করা গেছে, ব্যাংকে আমানত রাখা ক্ষুদ্র গ্রাহকদের আলোচনা। শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের পর রাজধানীর জিগাতলার গাবতলা মসজিদ, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে দেখা গেল পাঁচ থেকে ছয়জনের তিন-চারটি জটলা। তারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব জটলায় আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার ওপর ১৫ ভাগ আবগারি শুল্ক ধার্য। তাদের আলাপ-আলোচনায় বোঝা যাচ্ছে এ বিষয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ।

তারা বলছেন, এমনিতেই ব্যংকের আমানতের ওপর সুদ কমেছে, তার ওপর নতুন এ কর ব্যাংকে আমানতকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত তাদের উপরই ঘুরে-ফিরে চাপ প্রয়োগ করে সরকার।

এদিকে শুক্রবার সকালে জিগাতলা সালেক গার্ডেন কাঁচাবাজারের সামনে দেখা গেল একই চিত্র। সেখানে কয়েকজন জটলা বেধে একই আলোচনা করছেন। এখানে একজন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বাজেট পেশের পর এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। তার ওপর সারাবছর ধরে কষ্ট করে ব্যাংকে যে অর্থ রাখি সেখান থেকে যদি আবার টাকা কাটা হয় তাহলে আমরা যাব কোথায়?

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিষয়টি উত্থাপন করেন। বাজেট পেশের আগ থেকেই এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখা-লেখি হচ্ছিল। বাজেট পেশের পর এ বিষয়টির ওপর গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি নজর দেন।

ব্যাংকের আমানতকারীরা যারা বাজেট উপস্থাপন সরাসরি টেলিভিশনে দেখতে কিংবা রেডিওতে শুনতে পারেননি তারা অনেকেই মিডিয়া হাউজগুলোতে ফোন করে ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখার ওপর নতুন করে কর বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চান। বিষয়টি জানার পর অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একদিকে আমানতের ওপর সুদ কমছে, অন্যদিকে আমানতের ওপর কর বেড়েছে। এতে গ্রাহকরা দুইদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতি। ফলে আর্থিক খাতে ছায়া অর্থনীতির পরিমাণ বাড়বে।

উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুহিত ব্যাংক হিসাবে রাখা আমানতের উপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর কথা বলেছেন। ব্যাংক হিসাবের উপর ধার্য করা নতুন আবগারি শুল্ক অনুযায়ী এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত রাখলে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হবে না।

তবে এক লাখ টাকার উপর থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাখলে ৮০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে, যা বর্তমানে আছে ৫০০ টাকা। আর ১০ লাখ টাকার উপর থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে রাখলে ২ হাজার ৫০০ টাকা কেটে রাখা হবে, যা বর্তমানে আছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

একই সঙ্গে ১ কোটি টাকার উপর থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে রাখলে আবগারি শুল্ক দিতে হবে ১২ হাজার টাকা, যা বর্তমানে আছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর ৫ কোটি টাকার উপর ব্যাংকে রাখলে কেটে রাখা হবে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যাংকে রাখলে ১৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বাবদ কেটে রাখা হয়।

এফএইচএস/জেডএ/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।