নির্বাচনী নয়, বাস্তবমুখী বাজেটের প্রত্যাশা


প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ৩১ মে ২০১৭

রাত পোহালেই (বৃহস্পতিবার, ১ জুন) বাজেট আলোচনা। আর বছর পেরোলেই নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনের দমকা হাওয়া লাগবে এবারের বাজেটেই। সাধারণত, অবাস্তব আর উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়ে সরকারগুলোর শেষবেলার বাজেটকে বলা হয় ‘নির্বাচনী বাজেট’।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় সরকারের এবারের বাজেটও এর ব্যতিক্রম হবে না। এই বাজেটকে সরকারের টাকা ‘আয়ের বাজেট’বলেও উল্লেখ করছেন অনেকে। তারা বলছেন, এবারে উচ্চাভিলাষী আয়ের বাজেট ঘোষণা করে নির্বাচনী হিসাব কষে ব্যয় করতে চাইবে সরকার। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট দিয়েই ২০১৮-২০১৯ সালের অর্থবছরের ‘নির্বাচনী বাজেট’কে সামাল দিতে চাইবে সরকার।

আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা অনেকটাই লোক দেখানো এবং অবাস্তব বলে মনে করছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে সংসদ অধিবেশনে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারের বাজেটে নতুন ভ্যাট আইনও পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

কেমন হবে এবারের বাজেট, আসন্ন বাজেটে প্রত্যাশাই বা কী, বাস্তব রূপায়ণ কতটুকু গুরুত্ব পাবে, জনবান্ধব হওয়ার বিপরীতে নির্বাচনী বাজেট হবে কি না এমন সব বিষয় নিয়েই মতামত জানতে চাওয়া হয় দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের কাছে।

আসন্ন বাজেট অনেকটাই লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেট নিয়ে জাগো নিউজের কাছে মতামত রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজেটের যে গাণিতিক হিসাব রয়েছে, তা থেকে এবারের বাজেটও ভিন্ন কিছু নয়। এই বাজেট হবে সরকারের টাকা আয়ের বাজেট। সরকার টাকা আয় করে, সরকারই ভোগ করে। গণমানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এসব বাজেটে কিছু যায় আসে না। সাধারণ মানুষ কর দেয়। আর সরকার ভোগ করে।’

তিনি বলেন, ‘বড় বড় প্রকল্প এবং প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা কতিপয় ব্যক্তিকে কুক্ষিগত করার সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। গরিব-সাধারণ মানুষের পকেট কেটে এই টাকা নেয়া হচ্ছে।’

বাজেটের প্রত্যাশা প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা জরুরি। প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট কমিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা সামাজিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমে যাচ্ছে। ২০১২ সালে বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা নেমে ৭৮ শতাংশে আসে। এবার যে আকারের বাজেটের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করি না। বাজেটে যতই সুফলের কথা বলা হোক না কেন, বাস্তবায়ন না হলে কোনো ফল আসে না।

প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো দেশে বাজেট কিছুটা উচ্চাভিলাষী হবেই। তবে অলৌকিক কোনো চিন্তা নয়, বাস্তবায়নযোগ্য ধারণা থেকেই বাজেট মূল্যায়ন করা দরকার।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যা আয় হচ্ছে, তার রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে ৭০ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে উন্নয়নে। সরকারি লোকের বেতন-ভাতা দিতেই সব শেষ। উন্নয়ন হবে কিসে?  আয় এবং ব্যয় নীতির পরিবর্তন না আনলে রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাজেট নিয়ে কথা হয় অর্থনীতিবিদ মামুন রশিদের সঙ্গে। বলেন, রাজস্ব ব্যয়েই তো সব শেষ। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। বেসরকারি খাতের কোনো উন্নয়ন নেই। প্রবৃদ্ধির সংখ্যাগত তথ্য দেখানো হচ্ছে। কিন্তু কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ বাড়ছে না। তিনি আরও বলেন, মানবসম্পদ তৈরিতে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

এএসএস/জেডএ/ওআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।