প্রধানমন্ত্রীর চমক থাকছে বাজেটে
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন, আগামী (২০১৭-১৮) অর্থবছরের বাজেটই হবে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাজেট। দাবি অনুযায়ী জীবনের শেষ এ বাজেট ঘোষণার সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন তিনি। এজন্য আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সবার জন্যই কিছু না কিছু থাকছে।
তবে এবারের বাজেটের সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন। নতুন ভ্যাট আইনে সবক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ এবং আগামী ১ জুলাই থেকে তা বাস্তবায়ন করা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডেও লিপ্ত হন অর্থমন্ত্রী।
ভ্যাট আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখার বিষয়ে নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাজেট পাসের আগে চমক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তা ১ শতাংশ কমিয়ে ১৪ শতাংশ রাখা হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের টার্নওভারে ভ্যাটের ক্ষেত্রে সুবিধা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট আইন নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর যাতে এর প্রভাব না পড়ে সেজন্য বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। তাই সাতটি মৌলিক খাতের বিপুল পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও গত রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান ও সদস্য (ভ্যাট) জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে ‘ভোটার সন্তুষ্টি অর্জনের’ পথ খোঁজার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী।
তাই ব্যবসায়ীদের কিছুটা সন্তুষ্ট করতে শেষ মুহূর্তে ভ্যাটের হার ১ শতাংশ কমানো হতে পারে। জনতুষ্টির এ বাজেট পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। বর্তমানে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার ভ্যাটমুক্ত। আর ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। আগামী বাজেটে এ হার এবং টার্নওভারসীমা- দুটোই বাড়ানো হচ্ছে।
বাজেটে টার্নওভারসীমা ৮০ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। আর টার্নওভারে ভ্যাট ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হচ্ছে। বাজেট পাসের আগে জাতীয় সংসদের মন্ত্রিপরিষদের সভায় এসবের অনুমোদন নেয়া হবে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বিবেচনা করলে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট অনেক বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায়ও বেশি। এত বেশি ভ্যাটের হার কোনোমতেই সমীচীন নয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ হচ্ছে না। কৃষি ও কৃষিজাত, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও বেশকিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ভ্যাটের আওতামুক্ত থাকবে। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য সম্পূরক শুল্ক হারও বেশ কিছুটা পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। ফলে কিছু পণ্যের দাম বাড়বে, আবার বেশকিছু পণ্যের দাম কমবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মূলত জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বড় বাজেট দিতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এ বাজেট হবে বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ১১তম বাজেট। এরশাদের আমলে দুটি বাজেট দিয়েছিলেন তিনি।
আসছে বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট থেকে আসবে ৯১ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কর্পোরেট করের হার কিছুটা কমছে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে বাজেট ঘোষণার পর। চার লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে এক লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। চলতি বাজেটে যা ছিল ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রতিবারের মতো এবারও শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাত অগ্রাধিকার পাবে। তবে গণপরিবহন ও বিদ্যুতে বেশি বরাদ্দ থাকবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রী।
এমইউএইচ/এমএআর/আরআইপি