দেশব্যাপী টেলি সংযোগ আধুনিকায়নে চীনের আর্থিক সহায়তা


প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, ১৫ মে ২০১৭

দেশে ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীন। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী ১৬ লাখ গ্রাহক টেলিফোন সংযোগ পাবে। এজন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ও মাল্টিমিডিয়া সাবস্টেশন (এইএমএস) স্থাপনসহ বিদ্যমান এক্সচেঞ্চগুলোর সংস্কার করা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে চীন দেবে ১ হাজার ৮১৭ কোটি ২৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।

জানা গেছে, সম্প্রতি ‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ’ শীর্ষক এই প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করবে বিটিসিএল।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে চীন সরকার ঋণ হিসেবে দেবে ১ হাজার ৮১৭ কোটি ২৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৭৫৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রস্তাব পাওয়ার পর ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৬১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে চীনের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে ঋণ চুক্তি সই না হওয়ায় ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সে প্রকল্পটি বাতিল করে নতুন করে এই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিদ্যমান বিটিসিএলের পুরাতন টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন করা হবে। এতে ভয়েস কলের পাশাপাশি ইন্টারনেট ও ভিডিও আদান-প্রদানের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। ফলে জনসাধারণ স্বল্প ব্যয়ে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বপ্রকার তথ্যাদি পরস্পরের সঙ্গে বিনিময় করতে পারবেন। এছাড়া ই-গভর্নেন্স, ই-কমার্স, ই-এডুকেশন, ই-সায়েন্স, ই-হেলথ ও ই-কৃষিসহ অন্যান্য সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। সরকারের ভিশন-২০২১-এর লক্ষ্য পূরণে প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাই এটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই বিটিসিএল এবং চীন সরকারের নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান এম/এস জেট হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড এবং এম/এস জেট কর্পোরেশন কনসোর্টিয়ামের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এই লক্ষ্য অর্জনে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) ২০০৯ নীতিমালা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, নীতিমালায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দেশের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থাকরণ ও জাতীয় পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে সব সরকারি অফিসকে সংযুক্তকরণের দায়িত্ব দেয়া রয়েছে। কিন্তু বিটিসিএলের বিদ্যমান ল্যান্ড টেলিফোন নেটওয়ার্ক পুরাতন প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় শুধু ভয়েস কল ছাড়া অন্য কোনো সুযোগ নেই। ফলে সরকারের ভিশন ২০২১-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে দেশের বিদ্যমান পুরাতন আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ কপার বেইজড নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করে আধুনিক ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়ার জন্য চীন সরকারের ঋণ সহায়তায় প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

এমএ/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।