নতুন ভ্যাট আইনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করল এনবিআর


প্রকাশিত: ০২:৫৮ এএম, ০৫ মে ২০১৭

জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছিল ব্যাবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের সে কথা যেন সত্যি হতে চলেছে। কেননা নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনার কথা স্বীকার করেছে খোদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বৃহস্পতিবার এনবিআরের সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।সম্পতি নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা দিতেই এ বিবৃতি দেয় এনবিআর।

বিবৃতিতে বলা হয়, সঠিকভাবে হিসাবপত্র সংরক্ষণ করে উপকরণ কর রেয়াত নিয়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করলে কোনো ক্ষেত্রে মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে কোনো ক্ষেত্রে মূল্য অপরিবর্তিত থাকবে।আবার কোনো ক্ষেত্রে মূল্য হ্রাসও পেতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে বেশি উপকরণ কর রেয়াত পাওয়া যাবে, সেসব ক্ষেত্রে মূল্য হ্রাস পাবে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়,  নতুন ভ্যাট আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে।যেসব ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি পাবে সেগুলো হলো দেশি ব্র্যান্ডের কাপড়চোপড়, ভোজ্যতেল, চিনি, সুপার শপে বিক্রি, নির্মাণসামগ্রী, রড, বিদ্যুৎ, স্বর্ণ ইত্যাদি। তবে নানা কারণে মূল্য বৃদ্ধি ঘটে থাকে। মফস্বল থেকে শাক-সবজি ঢাকায় পৌঁছাতে দুই-তিনগুণ মূল্য বেড়ে যায়। সেখানে ভ্যাটের কোনো প্রভাব নেই।

এনবিআর বলছে, প্রচার করা হচ্ছে - অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা হিসাবপত্র রেখে রেয়াত নিতে অসমর্থ। একথা মোটেও ঠিক নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল উদ্দেশ্য হলো মূনাফা অর্জন করা। অতি ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানই মুনাফার উদ্দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকে এবং তাই নিজস্ব পদ্ধতিতে হলেও তাদের সকলের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখতে হয়। ভ্যাট ব্যবস্থায় কয়েকটি ফরম্যাটের মাধ্যমে এই হিসাবপত্র রাখতে হয় মাত্র, যা খুব সহজ। এছাড়া, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এই যুগে সফটওয়্যার ব্যবহার করে হিসাবপত্র রাখা যায় যা আরও সহজ। নতুন ভ্যাট আইনে বার্ষিক ৩০ (ত্রিশ) লক্ষ টাকা বিক্রয়কারী সব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটমুক্ত রাখা হয়েছে।

বিশ্বের অনেক দেশে এমন ভ্যাট নেয়া হয় জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে জুলাই থেকে গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) কার্যকর হতে যাচ্ছে। সেখানে চারটি করহার রয়েছে। সেখানে সাধারণ ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে রেয়াত গ্রহণ ছাড়া জিএসটি এর হার পাঁচ শতাংশ। অন্যদিকে, এধরনের খাদ্য সামগ্রীকে আমরা ভ্যাটমুক্ত রেখেছি। ভারতের অন্য তিনটি হার হলো প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ।  সাবান, টুথপেস্ট, রেফ্রিজারেটর, স্মার্টফোন ইত্যাদি ১৮ শতাংশ এবং গাড়ি, পান মসলা, পানীয় ইত্যাদি ২৮ শতাংশ।

এনবিআরের মতে, প্যাকেজ ভ্যাট কোনো ভ্যাট নয়। এটি একটি থোক কর। নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাটদাতাদেরকে প্যাকেজ ভ্যাটের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বিক্রি সর্বোচ্চ ৭-৮ লাখ টাকা, শুধুমাত্র এ ধরনের প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ ভ্যাট প্রদান করতে পারে। নতুন ভ্যাট আইনে বার্ষিক ৩০ লাখ টাকা বিক্রি হয় এমন সব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

সরকারের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করতে হলে সংস্কারের বিকল্প নেই। সরকারের রাজস্ব আহরণের মূল উৎস কাস্টমস, আয়কর এবং ভ্যাট সব ক্ষেত্রেই সংস্কার চলছে। চলমান সংস্কারের দুটি মূল দিক হলো অটোমেশন এবং আইন সংস্কার। অটোমেশনের মাধ্যমে সব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের নেটওয়ার্কে নিয়ে আসতে পারলে ভ্যাটের ভার বিভিন্ন স্তরে বণ্টিত হবে। সবাই অল্প ভ্যাট দেবে, তবে সবশেষে সরকার ভ্যাট পাবে অনেক বেশি। যা হবে জনগণের জন্য সহনীয় এবং সরকারের জন্য সুবিধাজনক।

এমএ/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।