১০ বছরে পাচার হয়েছে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা


প্রকাশিত: ০৪:৪৯ পিএম, ০১ মে ২০১৭

১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে তিন লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা (চার হাজার ৪৬১ কোটি ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার), যা দেশের বর্তমান মোট জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৪৯টি দেশের অর্থ পাচারের তথ্য রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিবছর অর্থপাচার হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এই ১০ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অর্থপাচার দুই ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয় তার ২৪ শতাংশ উন্নয়নশীল থেকে।

জিএফআই ২০১৩ সালে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেটা থেকে জানা যায়, ২০১৩ সাল পর্যন্ত হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ৫৫৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। ২০১০ সালে ৫৪০ কোটি ডলার পাচার হয়েছিল। তিন বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬৬ কোটি ডলার। নতুন প্রতিবেদনে পাচারের হার আরও বেশি।

সোমবার প্রকাশিত ‘নতুন গবেষণা: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বড় এবং স্থায়ী অবৈধ আর্থিক প্রবাহ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণ্য বা সেবা আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এসব অর্থ পাচার করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি গভীর উদ্বেগজনক। এর আগে সংস্থাটি যে হিসাব দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। এবার হিসাবের পদ্ধতিতে পরিবর্তনের সুবাদে সেটা স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের কারণ মূলত তিনটি। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি বেড়েছে বলে অর্থপাচারও বেড়েছে। এছাড়া দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অর্থপাচার বাড়ছে।

তার মতে, অর্থপাচার রোধ করতে হলে দুর্নীতি কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। নাগরিক জীবনেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই ১০ বছরের গড় হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত থেকে ৫৫ হাজার ৭ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এছাড়া ওই সময়ে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই হাজার ৩২৩ কোটি, নেপাল থেকে ৫২৫ কোটি, পাকিস্তান থেকে পাঁচ হাজার ৮৯৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তান থেকে পাচার হয়েছে ১১ হাজার ৭৯৬ কোটি ডলার।

জিএফআইর প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দেশের মোট বিনিয়োগের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। এ খাতের বিনিয়োগ কমে গেলেও গত দুই বছর পর্যন্ত আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ যন্ত্রপাতির মূল্য বেশি দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করা হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ একবার বিদেশে টাকা গেলে তা ফেরত আনা খুব কঠিন।

উল্লেখ্য, জিএফআই একটি অলাভজনক সংস্থা, যারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবৈধ আর্থিক প্রবাহ বা মুদ্রাপাচার নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে থাকে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে অর্থপাচার রোধে বিভিন্ন রকম পরামর্শের মাধ্যমে নীতিগত সহায়তা দিয়ে থাকে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর তারা অর্থপাচারের প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এমএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।