অর্থনীতির আকার বিবেচনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নগণ্য


প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৭
ছবি: জাগো নিউজ

অর্থনীতির আকার বিবেচনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নগণ্য, এমনটাই মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য পুঁজিবাজারের বিকাশ খুবই জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে শিল্প-বাণিজ্যের অর্থায়নে পুঁজিবাজারের অংশ মাত্র ১০ শতাংশ। ৯০ শতাংশ অর্থায়ন হয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে। অর্থনীতির জন্য এটি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।

শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ‘ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস ফর ইকোনমিক রিপোর্টার’ শীর্ষক কর্মশালায় তারা এমন মন্তব্য করেন। চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সোসাইটি বাংলাদেশ এবং ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক কমিশনার ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফ খান। আরও বক্তব্যে রাখেন সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি শহীদুল ইসলাম এবং ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো হচ্ছে। ১৯৮০-৮৫ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ ক্রমবর্ধমান হার ধরে রাখতে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে এটি হতে হবে বাস্তবমুখী শিক্ষার আলোকে। মাধ্যমিক স্তরে আমাদের শিক্ষার হার ৬৩ শতাংশ, আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার হার মাত্র ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় পুঁজিবাজার খুবই নগণ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে শিল্প-বাণিজ্যের অর্থায়নে এ খাতের অংশ মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ অর্থায়ন হয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে। ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করে। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত ও উন্নয়নশীল অন্য দেশগুলোতে বিনিয়োগের বড় অংশই আসে পুঁজিবাজার থেকে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের টেকসই বিকাশের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে, আর্থিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। আমাদের পুঁজিবাজারের অনেক কোম্পানিরই পারফরমেন্স তেমন ভালো নয়। কোম্পানিগুলো হয় মুনাফা করতে ব্যর্থ হচ্ছে, নয় এদের ম্যানেজমেন্ট ও উদ্যোক্তারা কোম্পানিকে লোকসান দেখিয়ে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

‘অনেক কোম্পানি আইপিওর এক দুই বছর আগে থেকে কৃত্রিমভাবে মুনাফা বাড়িয়ে দেখায়। এই ধরনের প্রবণতা বন্ধে পাঁচ থেকে ১০ বছরের ব্যালান্সশিট পরীক্ষা করা প্রয়োজন’ বলেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, সে হারে মানবসম্পদের উন্নয়ন হচ্ছে না। এশিয়ার ১২টি দেশের মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনে পাকিস্তান ছাড়া সব দেশ থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে টেকসই করতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে।

বিএসইসির সাবেক কমিশনার মো. আরিফ খান বলেন, যে দেশের পুঁজিবাজার যত বড়, সে দেশের অর্থনীতির আকার তত বড় হয়। একই সঙ্গে দেশের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে পুঁজিবাজারকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, লন্ডন, হংকংয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে পুঁজিবাজারের অবস্থা এখনও অনেক ছোট।

এ সময় পুঁজিবাজারকে বড় করার জন্য একই সঙ্গে পেনশন ফান্ড, লাইফ ফান্ড ও বন্ড মার্কেটকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে অভিমত তুলে ধরেন বিএসইসির সাবেক এই কমিশনার। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা যত বাড়বে, তাদের বিনিয়োগ তত বেশি সুরক্ষিত হবে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বাধ্য হবে।

এমএএস/এমএমজেড/ওআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।