ব্যাংক কর্মকর্তাদের সফট স্কিল সঙ্কট প্রকট


প্রকাশিত: ০৪:০৯ এএম, ২১ এপ্রিল ২০১৭

একজন ব্যাংক কর্মকর্তার যোগাযোগ, সৌজন্যতা, নমনীয়তা, সততা, আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, পেশাদারিত্ব, দায়িত্ববোধ, টিমওয়ার্ক, কর্মক্ষেত্রে নৈতিকতা এবং নেতৃত্বের মনোভাব হল সফট স্কিল।

হার্ভার্ড বিজনেস স্টাডি অনুযায়ী, ক্যারিয়ারে সাফল্য পেতে সফট স্কিলে ৮০ শতাংশ দক্ষতা থাকতে হবে। আর হার্ড স্কিলে এর পরিমাণ ২০ শতাংশ।

তবে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের কর্মীদের সফট স্কিল সঙ্কট প্রকট। অথচ তাদের সফট স্কিলের ওপর মাত্র ৪ শতাংশ প্রশিক্ষণ হয়েছে। আর হার্ড স্কিল প্রায় ৯৬ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে ‘ব্যাংকের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা-২০১৬ সালের ওপর পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে হার্ড স্কিল হল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড পেমেন্ট, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, শিক্ষাগত সনদ, ট্রেজারি অপারেশন, ঋণ ব্যবস্থাপনার মতো দক্ষতা। যা ব্যাংকিং খাতের একজন কর্মীর মোট দক্ষতার ২০ শতাংশ হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের এক্ষত্রে উল্টো চিত্র।

এতে আরও বলা হয়েছে, সিআইবির আদলে ব্যাংক কর্মীদের তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা নেয়ার পাশপাশি নৈতিকতা যাচাই করতে হবে। একই সঙ্গে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমন্বিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যেতে পারে।

বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী ও ইয়াছিন আলি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি এম. এহসানুল হক এবং ওয়ান ব্যাংকের অতিরিক্ত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জন সরকার। 

আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকিং খাতে মানব সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহারের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর বাইরে ব্যাংকের নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব ভাতা এবং দিবা যত্ম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে মানব সম্পদ বিভাগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৭-০৮ সালে আর্থিক সংঙ্কটের পিছনে মানব সম্পদ বিভাগের কিছু ভুল নির্দেশনা অনেকাংশে দায়ী।

ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, মানব সম্পদ বিভাগকে শুধু বদলির জন্য ব্যবহার না করে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে সৎ লোক প্রয়োজন। ভালো লোক নিয়োগ পেলে খারাপ ব্যাংকও মুনাফায় ফিরতে পারে। আবার বেসিক ব্যাংকের মতো ভালো ব্যাংকে খারাপ ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেয়ায় ক্ষতি হতে পারে।

হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে গতিশীলতা আনতে প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক ব্যাংকের ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে সকল সুবিধাসহ মেধা সম্পন্ন অনুষদ নিয়োগ করতে হবে।

ব্যাংকের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা-২০১৬ সালের পর্যালোচনা দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাসুদুল হক, প্রভাষক রেক্সোনা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং আল-আরাফা ব্যাংকের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মাযহারুল ইসলাম।

এমএ/এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।