তেলের দাম কমানোসহ সিপিডির ৫ দফা সুপারিশ


প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

জ্বালানি তেলের দাম কমানোহ আগামী বাজেটে পাঁচটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়ার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

প্রতিষ্ঠানটির মতে, ডিজেল ও করোসিন বেশি ব্যবহার করেন গরীব মানুষ। এখানে মাত্রাতিরিক্ত লাভ করার কোনো মানে হয় না। আগামীতে এগুলোর দাম কমালে গরীব মানুষ উপকৃত হবে। এছাড়া টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো, চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে আলাদা স্বাধীন কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।

রোববার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক বাজেট প্রস্তাবনায় এ পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।

সিপিডি বলছে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামে প্রভাব পড়বে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যাবে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর আগে জানিয়েছে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামে কোনো প্রভাব পড়বে না। খরচও বাড়বে না।

নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের প্রয়োজন আছে জানিয়ে সিপিডি বলছে, ১৫ শতাংশ মূসক হার ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ, এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে। এছাড়া আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিন্ন ১৫ শতাংশ মূসক হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আপাতত তা কমানোর সুযোগ এখন নেই। আগামী এক-দুই বছরে মূসক আহরণ বৃদ্ধি পেলে তা ক্রমান্বয়ে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের আকার বড় হলেও তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ছে না। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি সম্প্রসারণশীল বা বড় বাজেট নেয়ার অবস্থা বিদ্যমান। তবে বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে বড় বড় নীতি সংস্কার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর বড় বাজেট বলে যে কল্পকাহিনী বাজারে ছড়ানো হচ্ছে, তা একধরনের আর্থিক ভ্রম। বাজেট বড় বলা হচ্ছে, কিন্তু বড় নয়। কেননা, কর জিডিপি অনুপাত কিংবা ব্যয় জিডিপি অনুপাত আগের চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি।

তার মতে, গত কয়েক বছরে কর আহরণে সফলতা এলেও ব্যয় করার সামর্থ্য বাড়েনি। এটি একটি অদ্ভূত বিষয়। এছাড়া নির্বাচনের বছরে সরকারের পক্ষে বড় সংস্কার নেয়া কঠিন বলে মনে করেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হয় না বললেই চলে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বাজেট কি আমলাদের সংখ্যানির্ভর প্রক্রিয়া, নাকি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া?

তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা দেখা যায় না। এটি বাজেট-কাঠামোর মৌলিক সমস্যা। এতে কায়েমি স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে সম্পদ খরচের ক্ষমতা চলে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো এত বড় ঘটনা ঘটল, কিন্তু মন্ত্রিসভা কিংবা সংসদীয় কমিটিতে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি!

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সম্প্রসারণশীল বাজেটের পক্ষে। কিন্তু তা বাস্তবায়নও করতে হবে। বাজেটের আকার বাড়ছে, রাজস্বও বাড়ছে, কিন্তু অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়েনি। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে আগে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আনতে হবে।

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এ মুহূর্তে তিনটি কমিশন বাংলাদেশে জরুরি হয়ে পড়েছে। একটি হলো- ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন; দ্রব্যমূল্য নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এমন একটি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ কৃষি প্রাইজ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। একই সঙ্গে সরকারি ব্যয়মান নিশ্চিত করতে পাবলিক এক্সপেন্ডিচার রিভিউ কমিশন গঠন জরুরি।

এমএ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।