‘স্যার আমরা কই যামু, কী খামু’


প্রকাশিত: ০৮:৩৫ এএম, ০৮ এপ্রিল ২০১৭

সালেহা বেগম। বগুড়া থেকে আসা এই নারী গত ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন রাজধানীর হাজারীবাগে অবস্থিত অ্যাপেক্স ট্যানারিতে। ৯০০ টাকা দিয়ে কাজ শুরু করা সালেহার এখন মাসিক বেতন ছয় হাজার টাকা। রিকশাচালক স্বামীর উপার্জন ও নিজের এ স্বল্পআয়ে কোনোমতে চালিয়ে নেন সংসার।

স্বামীর পাশাপাশি নিজের আয়ের কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সালেহা এখন বেকার হওয়ার আশঙ্কায়। কারণ আদালতের নির্দেশে হাজরীবাগে থাকা ট্যানারির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর।

শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান সালেহার কর্মস্থল অ্যাপেক্স ট্যানারির গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় বিদ্যুতের বিভাগের এক কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বিক্ষুব্ধ সালেহা বলে ওঠেন, ‘স্যার আমরা কই যামু, কী খামু। মালিকগো তো অনেক টাকা আছে, তাগো সমস্যা হইবো না।’

পরে আলাপকালে সালেহা জাগো নিউজকে জানান, মাসিক ৯০০ টাকা বেতনে ১৫ বছর আগে এখানে কাজ শুরু করেন তিনি। এখন মাসে ছয় হাজার টাকা বেতন পান। পাশেই ঘরভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। স্বামী রিকশা চালায়। দু’জনে মিলে যে আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চলে।

তিনি জানান, হাজারীবাগ থেকে কারখানা সাভারে সরিয়ে নিচ্ছে। ওখানে (সাভারে) তাদের থাকার জায়গা নেই। তাদের পক্ষে এখান থেকে ওখানে গিয়েও কাজ করা সম্ভব নয়। ফলে এখন বেকার হয়ে যেতে হবে তাদের। বেকার হলে কী করবেন, কী খাবেন। তাদের কথা কেউ ভাবে না।

অ্যাপেক্স ট্যানারির আরেক শ্রমিক বরিশালের সাহিদা বলেন, ‘স্যার আমাদের কথা কে শুনবো। গরিবের কথা কেউ শুনে না। দুইডা মাস পাইলে আমরা বেতন ও ঈদের বোনাসটা পাইতাম। এখন কাজ বন্ধ হইয়া গেলে ঈদের বোনাস তো পামু না। বেতনও আটকে যাইতে পারে।’

তিনি জানান, চার বছর ধরে ট্যানারি কারখানায় কাজ করছেন। সামনের ঈদ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিল। ছেলে-মেয়ে আছে তাদের নতুন পোশাক, ভালো খাবার দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভালো খাবার তো দূরের কথা, ছেলে-মেয়ের মুখে ঠিকমতো খাবারও তুলে দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

Hazaribagh

রুমা ট্যানারির দুই শ্রমিক বাদল ও তরুণ বলেন, ‘আমাদের দুই মাসের (ফেব্রুয়ারি ও মার্চ) টাকা একসঙ্গে দেয়ার কথা। সেইসঙ্গে  সামনে ঈদের বোনাস পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেলে বকেয়া টাকা তো আর পাব না। ঈদের বোনাসও হবে না।’

‘সরকার তো অনেক সময় দিয়েছে। আমাদের আর দুইটা মাস দিলে কি সমস্যা ছিল। আমরা আমরা বেতন-বোনাসটা পাইতাম। কিন্তু এখন আর কিছুই পাব না। তবে সরকারের কাছে দাবি, আমাদের বকেয়া টাকা আদায়ে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং আমাদের কাজের ব্যবস্থা করা হয়’- বলেন বাদল।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কাজ না করতে পারলে মাল ডেলিভারি দিতে পারব না। আর মাল ডেলিভারি দিতে না পারলে বেতন দেব কিভাবে?’

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার সরকারকে বলেছি সাভারে গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য। কিন্তু এখানো সেখানে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়নি। আমরা কাজ করবো কিভাবে। সাভারে ৫০টির মতো কারখানা ওয়েট ব্লু পর্যন্ত কাজ করছে, এ কাজ করতে গ্যাস লাগে না। কিন্তু ওখানে যে কাজ হচ্ছে তার বর্জ্য পরিশোধন না করেই সরাসরি নদীতে ফেলছে। তাহলে আমাদের ওই জায়গায় গিয়ে লাভ কী?’

এরআগে শনিবার সকালে আদালতের নির্দেশনা মেনে পরিবেশ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে হাজারীবাগে থাকা ট্যানারিগুলোতে পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি টিম গ্যাস সংযোগ, ছয়টি টিম বিদ্যুৎ সংযোগ এবং চারটি টিম পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ শুরু করে।

সব ট্যানারির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রোরবার দুপুরের মধ্যেই এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) রাইসুল আলম মণ্ডল।

তিনি বলেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কার্যক্রম শুরু হয়। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে। কারণ আগামীকাল দুপুরের মধ্যে আদালতে আমাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

এসআই/এমএএস/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।