ডেল্টা লাইফে ৮০ হাজার গ্রাহকের বীমা দাবি বকেয়া
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে পলিসির মেয়াদ শেষে বীমা দাবির টাকা না পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে দাবি উত্থাপিত হলেও ৮০ হাজারের বেশি গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করেনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ডিসেম্বর মাসে ডেল্টা লাইফে নতুন ৩০ হাজার ৫১০ জন গ্রাহকের বীমা দাবি উত্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ডিসেম্বর মাসের আগে উত্থাপিত হওয়া ৬১ হাজার ২০৯ জন গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা বকেয়া ছিল।
ফলে ডিসেম্বর মাসে কোম্পানিটিতে নিষ্পত্তিযোগ্য প্রক্রিয়াধীন বীমা দাবির সংখ্যা দাঁড়ায় ৯১ হাজার ৭১৯টি। এর মধ্যে ১১ হাজার ৪৬৮ জন গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি ৮০ হাজার ২৪১ জন গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা অপরিশোধিত রয়ে গেছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডেল্টা লাইফে বীমা দাবির টাকা না পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার।
এদিকে দেশে ব্যবসা করা ৩১টি জীবন বীমা কোম্পানিতে ২০১৬ সাল শেষে অপরিশোধিত বীমা দাবির সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৯৩ হাজার ৭০৬টি। অর্থাৎ জীবন বীমা খাতে অপরিশোধিত থাকা মোট বীমা দাবির ৪১ দশমিক ৪২ শতাংশই ডেল্টা লাইফের।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে প্রতিষ্ঠানটির দাখিল করা আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল শেষে ডেল্টা লাইফের প্রিমিয়াম আয়, বিনিয়োগ ও লাইফ ফান্ড আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। আইনি সীমার মধ্যে রয়েছে ব্যবস্থাপনা খাতের ব্যয়। তবে ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন বা বিনিয়োগ থেকে আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে তামাদি পলিসির সংখ্যা।
ব্যবস্থাপনা খাতের ব্যয় ২০১৬ সালে আইনি সীমার মধ্যে থাকলেও ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটি আইন লঙ্ঘন করে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা অবৈধভাবে খরচ করেছে।
এর মধ্যে ২০১৪ সালে আট কোটি ২৩ লাখ, ২০১৩ সালে ১৭ কোটি ৮৭ লাখ, ২০১২ সালে নয় কোটি ৯২ লাখ, ২০১১ সালে আট কোটি ৯৭ লাখ এবং ২০১০ সালে আট কোটি ৫১ লাখ টাকা অবৈধভাবে খরচ করা হয়। ব্যবস্থাপনা খাতে অবৈধভাবে ব্যয় করা এ অর্থের ৯০ শতাংশ বীমা গ্রাহকদের (পলিসিহোল্ডার) এবং বাকি ১০ শতাংশ শেয়ার গ্রাহকদের (শেয়ারহোল্ডার) প্রাপ্য। অতিরিক্ত খরচ করা না হলে এ টাকা পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডাররা বোনাস হিসেবে পেতেন।
গ্রাহককে ফাঁকি দিতে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের পলিসি তামাদি করে দিচ্ছে জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির মোট ৭৫ হাজার ১৪০টি পলিসি তামাদি হয়ে গেছে। আগের বছর ২০১৫ সালে ৭৩ হাজার ৫৪৬টি পলিসি তামাদি হয়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে তামাদি পলিসির সংখ্যা বাড়ছে
এদিকে ২০১৫ সালে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা পলিসির ৩৩ শতাংশের প্রিমিয়াম ২০১৬ সালে নবায়ন বাবদ আদায় করতে পারেনি ডেল্টা লাইফ। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি নতুন পলিসি বিক্রি করে প্রিমিয়াম আয় করে ১০৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে নবায়নে ৬৭ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। অর্থাৎ বছর না ঘুরতেই কোম্পানিটির ৩৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার পলিসি বন্ধ হয়ে গেছে।
শুধু ২০১৬ সাল নয় প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি করা নতুন পলিসির ৩০ শতাংশের উপরে বছর না ঘুরতেই বন্ধ হয়ে গেছে। ডেল্টা লাইফ ২০১০ সালে ৪৬ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২০১১ সালে ৪৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ২০১২ সালে ৩৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৫৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৬৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৫৭ দশমিক ১৩ শতাংশ আগের বছরের বিক্রি করা পলিসির প্রিমিয়াম নবায়ন আদায় করতে সক্ষম হয়।
ডেল্টা লাইফের ইনভেস্টমেন্ট রিটার্নের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন দাঁড়িয়েছে ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা কম। ২০১১ সালের পর এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠানটির ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। ডেল্টা লাইফের ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন ২০১১ সালে ২১১ কোটি ২৯ লাখ, ২০১২ সালে ২৩২ কোটি ৭৬ লাখ, ২০১৩ সালে ২৬৭ কোটি ৭৬ লাখ, ২০১৪ সালে ৩০০ কোটি ২৮ লাখ এবং ২০১৫ সালে ৩০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ছিল।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা ডেল্টা লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা স্বপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, অপরিশোধিত বীমা দাবির সংখ্যা, তামাদি পলিসি, প্রিমিয়াম আয়সহ ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য আমরা আইডিআরএ’র কাছে পাঠিয়েছি। আইডিআরএ’র কাছে দেয়া সব তথ্যই ঠিক আছে।
৮০ হাজারের উপরে বীমা দাবি অপেরিশোধিত থাকা, ৭৫ হাজারের উপরে পলিসি তামাদি হয়ে যাওয়া এবং ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্য বিশ্লেষণ করে এর কারণ বলা যাবে। আমাদের সামনে সব সময় তথ্য থাকে না। তাই এ মুহূর্তে এর কারণ বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এমএএস/এমএআর/এনএফ/জেআইএম