ব্যবসার জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধান : শেখ কবির


প্রকাশিত: ০৮:৩০ এএম, ০৪ এপ্রিল ২০১৫

ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা, আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষ পোড়ানো ও সহিংসতাসহ বছরের শুরু থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের ব্যবসায়-বাণ্যিজের অবস্থা নাজুক। এর বাইরে নয় বীমা ব্যবসায়ও। গত আড়াই মাসের সহিংসতায় বীমা খাত প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও মানুষের মনে আতঙ্ক কমেনি। দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এ জন্য সরকারের উচিত চলমান সহিংসতা দমন না করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ করা।

কারণ ব্যবসায়ীরা চায় ব্যবসায়ের সুস্থ পরিবেশ। এ জন্য দীর্ঘ মেয়াদী রাজনৈতিক সমাধান দরকার বলে মনে করেন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতির শেখ কবির হোসেন। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে দেশের বিমা শিল্প নিয়ে একান্ত আলাপ করেন শেখ কবির। সাক্ষাতকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম।

দেশের বীমা শিল্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে শেখ কবির হোসেনের নাম। সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেখ কবির বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি সিডিবিএলের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন।

হলিফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। শেখ কবির বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেম্বার অব গভর্নরস, ইসলামী আই হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

শেখ কবির হোসেন বলেন, যেকোনো দেশের অর্থনীতিতে বীমা শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে বীমা শিল্প নিয়ে অনেক হতাশার জায়গা রয়েছে। একই সঙ্গে সফলতাও রয়েছে। এ খাতের ব্যর্থতার চেয়ে সফলতা বেশি বলে দাবি করেন ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের এ সভাপতি।

তিনি বলেন, বীমা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রতিষ্ঠার পর এ খাতে অনেক অনিয়ম রোধ করা সম্ভাব হয়েছে। ফলে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে। আগের তুলনায় কমেছে অনিয়ম সঙ্গে সঙ্গে বীমার প্রতি বেড়েছে মানুষের আস্থা। তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের বীমা শিল্পকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে এমনটি জানিয়ে শেখ কবির বলেন, গত আড়াই মাসের সহিংসতায় স্থবির হয়ে পড়েছে এ খাত।

জাগো নিউজ : বছরের শুরু থেকে চলে আসা রাজনৈতিক সহিংসতা এখন অনেকটা কমে এসেছে। এটি ব্যবসায় বান্ধব পরিবেশের জন্য উপযোগী বলে আপনি মনে করেন?

শেখ কবির : এখন দৃশ্যত মনে হচ্ছে সহিংসতা কিছুটা কমেছে, সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলা যাবে না। এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। এ পরিস্থিতি আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বিদেশিরা এখন বাংলাদেশে আসছে না। আমাদের ব্যবসায়ীরা বিদেশে কার্যাদেশ নিচ্ছে। দেশের আমদানি-রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বীমা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সর্ম্পকযুক্ত। সেই কারণে সার্বিক ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে বীমা শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চাই। রাজনৈকিততিক সমস্যার সমাধান রাজনীতিবিদরাই করবেন। আমি সরকার ও বিরোধী জোটের প্রতি আহ্বান জানাবো, সহিংসতা বন্ধ করে উভয়ে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করুন। কারণ আমরা চাই ব্যবসা করার সুস্থ পরিবেশ। এ জন্য দরকার দীর্ঘ মেয়াদী রাজনৈতিক সমাধান।  

দেশের বীমা শিল্পে অনিয়মই নিয়ম এমন কথা প্রচলিত রয়েছে। বাকিতে ব্যবসা, কমিশন, শাখা খোলা, কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানা বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবির হোসেন বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ম অনেক কমেছে। এক্ষেত্রে আমারও প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশের কোথাও আছে যেখানে অনিয়ম নেই। আইন তৈরি হবে। আবার কেউ কেউ সেটি ভঙ্গও করবে। তার জন্য চাই বিচার। তবে সেটা সুষ্ঠ্য হতে হবে। এটাই নিয়ম। আমরা মানুষ আমাদের ভুল আছে। অনেকে ইচ্ছা করে ভুল করে। তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। আইডিআরএ এসব অপকর্মের বিচার করছে।

বিআইএ সভাপতির শেখ কবির বলেন, বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ অনেক আইন বিধি বিধান এখনো করতে পারেনি। যুগোপযোগী আইন না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। যেমন ব্যবস্থাপনার খরচ কী হবে সেটি এখনো করতে পারেনি। এখনো পাকিস্থান আমলের ৫২ রুলস চলছে। এখন সব কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। আগে যে এমডির মূল্য ছিল ২০ হাজার টাকা এখন তার মূল্য হয়েছে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। কিন্তু ওই রুলস অনুযায়ী তাকে আমি এত টাকা দিতে পারবো না। সে ক্ষেত্রে আমাকে ফাঁক ফোঁকর খুঁজতে হবে। অতএব নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত সব বিধি প্রবিথি তৈরি করা। এরপর সেগুলো বাস্তবায়ন করলে ভালো হতো। এগুলো করতে তাদের হয়তো কোথাও বাধা থাকতে পারে।

বীমা কোম্পানিগুলো অনিয়মের মধ্যে সব থেকে আলোচিত হলো বাকিতে ব্যবসা করা। আইডিআরএ নিয়মিত বিরতিতে বাকি ব্যবসার কারণে বিভিন্ন বিমা কোম্পানিকে জরিমানা করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ কবির বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাকি ব্যবসা ধরতে গেলে নাই। তবে কমিশন দেয়ার ক্ষেত্রে এখনো সফলতা আনতে পারিনি। এইখানে আমি ব্যর্থ হয়েছি। একটা পর্যায়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। আইডিআরএ কমিশনের বিষয়ে উদ্যোগ নিলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। কিন্তু তারা কমিশন বন্ধে উদ্যোগ নিচ্ছে না। হয়তো আইন কানুনে সমস্য আছে।

জাগো নিউজ : বীমা কোম্পানির লাইসেন্স দেয়ার সময় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার শর্ত রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত ১০টির বেশি বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি কেন?

শেখ কবির : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে তাদের অনেক সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআর যেসব বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ব্যর্থ হওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিল। আমি আইডিআরকে বলে বীমা কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সে সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে তাদের তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আমি চিঠি দিবো।

জাগো নিউজ: ব্যস্ততার মাঝে মুল্যবান সময় দেওয়ার জন্য জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

শেখ কবির : আপনাকেও ধন্যবাদ

এসআই/বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।