ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে দ্বিগুণ


প্রকাশিত: ০৫:৫৮ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দরপতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশের শেয়ারবাজার। মূল্যসূচকের সঙ্গে প্রায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহের (১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি) পাঁচ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসইর) ১ হাজার ৬৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৪৫ দশমিক ১২ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। এর আগে টানা দুই সপ্তাহ বাজারটিতে লেনদেন কমে।

লেনদেনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে মূল্যসূচকও বেড়েছে। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ ডিএসইতে মূল্যসূচক বাড়লো। আগের সপ্তাহে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছিল ১৪৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে এই সূচকটি ২৫৩ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছিল।
 
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দীর্ঘ মন্দার পর গত বছরের জুলাই থেকে ইতিবাচক প্রবণতায় ফেরার ইঙ্গিত দিতে থাকে শেয়ারবাজার। প্রায় প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে মূল্যসূচক ও লেনদেন। ছোট ছোট উথ্যান-পতনের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ৫ হাজার পয়েন্টের ঘরে চলে আসে ডিএসইএক্স। সেই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে আসে হাজার কোটি টাকার ঘরে।

জানুয়ারি শুরু থেকে টানা বাড়তে থাকে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে উল্লম্ফন ঘটে লেনদেনেও। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে ডিএসইএক্স সূচক ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। লেনদেন লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যায় ২ হাজার কোটি টাকার ঘরে। জানুয়ারি মাসের ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২১ কার্যদিবসই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়।

এরমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয় ৩ দিন এবং দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয় ৭ দিন। মাসটিতে ডিএসইতে প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৮৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যা ২০১০ সালের পর এক মাসের সর্বোচ্চ গড় লেনদেন। ২০১০ সালের মহাধ্বসের পর গত জানুয়ারি মাসের আগে আর কখনো এক মাসের প্রতি কার্যদিবসে গড়ে এতো টাকার লেনদেন হয়নি।

এমন অস্বাভাবিক উথ্যানের পর ২৩ জানুয়ারি থেকে আবার পতনের কবলে পড়ে শেয়ারবাজার। চলতি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত টানা ১০ কার্যদিবস লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কমে। সেই সঙ্গে কমে যায় লেনদেনের গতি। ফলে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া লেনদেন নেমে আসে ৬’শ কোটি টাকার ঘরে। তবে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লেনদেন হওয়া ৮ কার্যদিবসের মধ্যে ৭ কার্যদিবসই সূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে আবারও হাজার কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।

গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয় ৩৩৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে ১৮৬টির দাম বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির। সপ্তাহটিতে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৩৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

শেষ সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৭৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বা ৪৫ দশমিক ১২ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতি কর্যদিবসে গড়ে ২২২ কোটি ২ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ লেনদেন কমেছিল।

গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশই ছিল ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এছাড়া বাকি ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের।

সপ্তাহজুড়ে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৬১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বারাকা পাওয়ারের লেনদেন হয়েছে ১৭৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। ১৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এ্যাপোল ইস্পাত।
 
লেনদেনে এরপর রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, এসিআই ফরমুলেশন, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস, ডরিন পাওয়ার এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি।

অপরদিকে দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানির মধ্যে মালেক স্পিনিংয়ের ২১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ফরচুন সুজের ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মার ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ, আমান ফিডের ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বারাকা পাওয়ারের ১২ শতাংশ, রিজেন্ট টেক্সটাইলের ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ, গোল্ডেন সনের ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ, ডরিন পাওয়ারের ১০ শতাংশ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫০৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

এমএএস/এমআরএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।