আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে বিশ্বব্যাংকের বড় সহায়তা


প্রকাশিত: ০৭:৩৫ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে বড় সহায়তা দিচ্ছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এ সংস্থাটির অর্থায়নে এ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য গৃহীত প্রকল্পের আওতায় আবহাওয়া অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় ও শাখা কার্যালয়ে বসবে উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি।

‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক আবহাওয়া ও জলবায়ু সেবা প্রকল্পে’ মোট ব্যয় হবে ৯৮০ কোটি টাকা। এতে সহজ শর্তে ৮৮৮ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৯২ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে প্রকল্পটির প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে, যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে পারবে। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়নে সক্ষমতাও অর্জন হবে।

প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে। প্রায়শই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, আকস্মিক বন্যা ও টর্নেডোসহ নানা দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। এ ছাড়া প্রায় ৭২০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল থাকায় এই এলাকায় লাখ লাখ মানুষকে জলোচ্ছ্বাস ও সৃষ্ট জলাবদ্ধতা এবং লবণাক্ততার শিকার হয়ে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে ১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৮৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের সহায়ক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিল থেকে এ ঋণ দেয়া হবে, যা পরিশোধে ৩৮ বছর সময় পাবে বাংলাদেশ। এতে রেয়াতকাল ধরা হবে ৬ বছর। রেয়াতকাল পরবর্তী সময়ে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, সঠিক সময়ে নির্ভুল পূর্বাভাস দেয়া এবং প্রশমনের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হলে এসব দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবহাওয়া, পানি ও জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্যাদি সঠিকভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রক্ষেপণ করাসহ টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। তাই বিশ্বব্যাংক আঞ্চলিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে এ ঋণ দিচ্ছে।

প্রকল্পটি তিনটি কম্পোনেন্টের মধ্যে কম্পোনেন্ট-এ বাস্তবায়ন করবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। এ অংশের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও ব্যবহার করে দৈনন্দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস বা তথ্যাদি আরও নির্ভুলভাবে দেয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া সরকারে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দেশীয় ও আন্ততর্জাতিক পর্যায়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে।

কম্পোনেন্ট-বি বাস্তবায়ন করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ অংশের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত দেশের সঙ্গে কারিগরি ভারসাম্য বজায় রেখে এর বিভিন্ন হাইড্রোলজিক্যাল পরিমাপ, উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রক্ষেপণ করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব স্টেশনকে স্বয়ংক্রিয়করণ করা হবে। ফলে বন্যা ও আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাস এবং প্রশমনে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে কারিগরি সহায়তা অর্জন সম্ভব হবে।

কম্পোনেন্ট-সি বাস্তবায়ন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এ অংশের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশের কৃষি আবহাওয়া, নদ-নদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত তথ্যাদি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতির মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব হবে।

এমএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।