পুঁজিবাজারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মূল্যসূচক


প্রকাশিত: ১০:৩৩ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

টানা দরতপনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। তার আগের সপ্তাহে এই সূচকটি ২৫৩ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছিল।
 
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দীর্ঘ মন্দার পর গত বছরের জুলাই থেকে ইতিবাচক প্রবণতায় ফেরার ইঙ্গিত দেয় শেয়ারবাজার। প্রায় প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে মূল্যসূচক ও লেনদেন। ডিএসইএক্স সূচক গত ২৭ ডিসেম্বর ৫ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে। এর আগে লেনদেন ৪ হাজার ৩০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার পয়েন্টের মধ্যে অবস্থান করছিল। আর ৩০০ কোটি টাকার ঘরে থাকা লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
 
তবে জানুয়ারিতে টানা বাড়তে থাকে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে লেনদেন। ঘটতে থাকে একের পর এক রেকর্ড। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে সূচকটি ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। লেনদেন পৌঁছে যায় ২ হাজার কোটি টাকার ঘরে।
 
জানুয়ারি মাসের ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২১ কার্যদিবসই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। এরমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয় তিনদিন এবং দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয় ৭ দিন। মাসটিতে ডিএসইতে প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৮৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যা ২০১০ সালের পর একমাসের সর্বোচ্চ গড় লেনদেন। ২০১০ সালের মহাধসের পর গত জানুয়ারি মাসের আগে আর কখনো একমাসের প্রতি কার্যদিবসে গড়ে এতো টাকার লেনদেন হয়নি।
 
এমন অস্বাভাবিক উত্থানের পর জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে এসে আবার পতনের কবলে পড়ে শেয়ারবাজার। মূল্যসূচক পতনের সঙ্গে প্রতিদিনই কমতে থাকে লেনদেন। ২৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০ কার্যদিবস লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কমে। তবে গত সপ্তাহের শেষ তিন কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেন উভয় কিছুটা বেড়েছে।
 
ফলে গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে (৫ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স’র পাশাপাশি অন্য সূচকগুলোও বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইএক্স ১৪৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয় ৩৩২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট। এরমধ্যে ২৭৭টির দাম বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির।
 
মূল্যসূচক ও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়লেও সপ্তাহটিতে লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। এ নিয়ে ডিএসইতে টানা দুই সপ্তাহ লেনদেন কমলো। গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৪ হাজার ৭৯৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১ হাজার ১১০ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন কমেছিল ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ২৩ লাখ টাকা বা ৪৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
 
গত সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয়েছে ৭৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৯৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২২২ কোটি ২ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।
 
গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৯২ দশমিক ৫২ শতাংশই ছিল ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এছাড়া বাকি ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ১ দশমিক শূন্য ৫৩ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের।
 
সপ্তাহজুড়ে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লংকাবাংলা ফিন্যান্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এসিআই ফরমুলেশনের লেনদেন হয়েছে ১০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ৯৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো।
 
লেনদেনে এরপর রয়েছে- প্যাসেফিক ডেনিমস, সাইফ পাওয়ারটেক, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস, অ্যাপোল ইস্পাত, ইসলামী ব্যাংক, সেন্ট্রাল ফারমাসিটিক্যাল এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স।
 
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
 
এমএএস/জেএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।